পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য সংগ্ৰহ হাসিয়া কছিলাম, বিয়ে ভাঙেনি, কিন্তু ভেঙেচেন কালিদাসবাবু -বরের বাপ নিজে । পরের ভিক্ষের দানে ছেলে-বেচা-পণের কড়ি হাত পেতে নিতে তিনি লঙ্গ পেলেন। আমিও বেঁচে গেলাম। এই বলিয়া ব্যাপারটা সংক্ষেপে বিস্তুত করিলাম । বৈষ্ণবী সবিস্ময়ে কহিল, বল কি গো, এ যে অঘটন ঘটল । বলিলাম, ঠাকুরের দয়া। শুধু কি গহরগোসাইজই অন্ধকারে পচা নদীর জলে ডুব মারবে, আর সংসারের কোথাও কোন অঘটন ঘটবে না ? তার লীলাই বা প্রকাশ পাবে কি করে বল ত ? বলিয়াই কিন্তু বৈষ্ণবীর মুখ দেখিয়া বুঝিলাম কথাটা আমার ভালো হয় নাই-মাত্রা ছাড়াইয়া গিয়াছে। বৈষ্ণবী কিন্তু প্রতিবাদ করিল না, শুধু হাত তুলিয়া মন্দিরের উদ্দেশে নিঃশবে নমস্কার করিল, যেন অপরাধের মার্জনা করিল। সম্মুখ দিয়া একজন বৈষ্ণবী মস্ত একথালা লুচি লইয়া ঠাকুরঘরের দিকে গেল। দেখিয়া কহিলাম, আজ তোমাদের সমারোহ ব্যাপার। বোধ হয় বিশেষ কোন পৰ্ব্বদিন—না ? বৈষ্ণবী কহিল, না, আজ কোন পৰ্ব্বদিন নয়। এ আমাদের প্রতিদিনের ব্যাপার, ঠাকুরের দয়ায় অভাব কখনো ঘটে না । কহিলাম, আনন্দ্রের কথা । কিন্তু আয়োজনটা বোধ করি রাত্রেই বেশী করে कब्राउ श्ब्र ? বৈষ্ণবী কহিল, তাও না । সেবার সকাল-সন্ধ্য নেই, দয়া করে যদি দুদিন থাকো নিজেই সব দেখতে পাবে। দাসীর দাসী আমরা, ওঁর সেবা করা ছাড়া সংসারে আর ত আমাদের কোন কাজ নেই। এই বলিয়া মন্দিরের দিকে হাত-জোড় করিয়া জার একবার নমস্কার করিল। জিজ্ঞাসা করিলাম, সারাদিন কি তোমাদের করতে হয় ? বৈষ্ণবী কহিল, এসে যা দেখলে, তাই । কহিলাম, এসে দেখলাম বাটনা বাটা, কুটনো-কোট, দুধ জাল-দেওয়া, মালা-গাথা, কাপড় রঙ করা—এমনি অনেক কিছু। তোমরা সারাদিন কি শুধু এই করো ? বৈষ্ণবী কহিল, সারাদিন শুধু এই করি। কিন্তু এসব ত কেবল ঘর-গৃহস্থালীর কাজ, সব মেয়েরাই করে । তোমরা ভজনগাধন কর কখন ? বৈষ্ণবী কহিল, এই আমাদের ভজন-সাধন । এই রাধা-বাড়া, জল-তোলা, কুটনো-বাটন, মালা-গাথা, কাপড়-ছোপান—একেই ৰলে সাধনা ?