পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐীকান্ত त्रं । মনে হচ্ছে রতন তামাক নিয়ে আসবার আগে আমার হাত দুটো তোমার গলায় জড়িয়ে দিই। দিলে কি করবে বলো ত! বলিয়াই হাসিয়া উঠিল, কহিল, ছুড়ে ফেলে দেবে না ত । আমিও হাসি রাখিতে পারিলাম না, বলিলাম, দ্বিয়েই দেখ না। কিন্তু, এত হাসি-সিদ্ধি থেরেচ না কি ? সিড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। বুদ্ধিমান রতন একটু জোর করিয়াই পাফেলিয়া উঠিতেছিল। রাজলক্ষ্মী হাসি চাপিয়া চুপি চুপি বলিল, রতন আগে যাক, তারপরে তোমাকে দেখাচ্চি সিদ্ধি খেয়েচি কি জার কিছু খেয়েচি । কিন্তু বলিতে বলিতেই তাহার গলা হঠাৎ ভারী হইয়া উঠিল, কহিল, এই অজানা জায়গায় চার-পাচদিন আমাকে একলা ফেলে রেখে তুমি পুটুর বিয়ে দিতে গিয়েছিলে? জানে, রাতদিন আমার কি করে কেটেচে ? হঠাৎ তুমি আসবে আমি জানব কি করে ? হা গো হা, হঠাৎ বৈকি! তুমি সব জানতে । শুধু আমাকে জব্দ করার জন্যেই চলে গিয়েছিলে । রতন আসিয়া তামাক দিল, বলিল, কথা আছে মা, বাবুর প্রসাদ পাব । ঠাকুরকে খাবার আনতে বলে দেব । রাত বারোটা হয়ে গেল । বারোটা শুনিয়া রাজলক্ষ্মী ব্যস্ত হইয়া উঠিল—ঠাকুর পারবে না বাবা, আমি নিজে যাচ্চি। তুই আমার শোবার ঘরে একটা জায়গা করে দে । খাইতে বসিয়া আমার গঙ্গামাটির শেষের দিনগুলোর কথা মনে পড়িল । তখন এই ঠাকুর ও এই রতনই আমার খাবার তত্ত্বাবধান করিত। তখন রাজলক্ষ্মীর খোজ লইবার সময় হুইত না । আজ কিন্তু ইহাদের দিয়া চলিবে না-রান্নাঘরে তাহার নিজের যাওয়া চাই। কিন্তু এইটাই তাহার স্বভাব, ওটা ছিল বিকৃতি । বুঝিলাম, কারণ যাহাই হোক, আবার সে আপনাকে ফিরিয়া পাইয়াছে। খাওয়া সাঙ্গ হইলে রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, পুটুর বিয়ে কেমন হ’লে ? বলিলাম, চোখে দেখিনি, কানে শুনেছি ভালোই হয়েছে। চোখে দেখনি ? এতদিন তবে ছিলে কোথায় ? বিবাহের সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলিলাম, গুনিয়া সে ক্ষণকাল গালে হাত দিয়া ৰাকিয় কহিল, অবাকু করলে। আসবার আগে পুটুকে কিছু একটা যৌতুক দিয়েও এলে না ? সে আমার হয়ে তুমি দিও ! রাজলক্ষ্মী বলিল, তোমার হয়ে কেন, নিজের হয়েই মেয়েটাকে কিছু পাঠিয়ে দেৰ।