পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় রমণীবাবু ক্রুদ্ধকণ্ঠে বলিলেন, শুনতে পাই আজকাল প্রায়ই তুমি বাড়ি থাকো না— কাজটা কি ছিল একটু শুনতে পাইনে ? সবিতা কছিলেন, না, সে তোমার শোনবার নয়। বিমলবাবু, আজও আপনার যাওয়া হোলো না ? বিমলবাবু বলিলেন, না, হোলো না। জ্যাঠামশাই একটু না সারলে বোধ করি যেতে পারবো না । কথাটা তাহার শেষ হইবামাত্র রমণীবাবু সরোষে বলিয়া উঠিলেন, আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি বাইরে গিয়েছিলে ? সবিতা শান্তভাবে উত্তর দিলেন, তুমি তো তখন ছিলে না। জবাবটা ক্রোধ উদ্রেক করিবার মতো নয়, কিন্তু তিনি রাগিয়াই ছিলেন, তাই হঠাৎ চেচাইয়া উঠিলেন—থাকি না-থাকি সে আমি বুঝবো, কিন্তু আমার হুকুম ছাড় এক-পা বার হবে না আজ স্পষ্ট বলে দিলুম। শুনতে পেলে ? শুনিতে সকলে পাইলেন ; বিমলবাবু সঙ্কোচে ব্যাকুল হইয়া কহিলেন, রমণীবাবু, আজ আমি উঠি—কাজ আছে। না না, আপনি বস্কন । কিন্তু এই সব বেলাল্লা-পনা আমি যে বরদাস্ত করিনে তাই শুধু ওকে জানিয়ে দিলুম। সবিতা প্রশ্ন করিলেন, বেলাল্লা-পনা তুমি কাকে বল ? বলি, তুমি যা করে বেড়াচ্চো তাকে। যখন তখন যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানোকে ! কাজ থাকলেও যাবো না ? না। আমি যা বলবো সেই তোমার কাজ । অন্য কাজ নেই। তাই তো এতকাল করে এসেচি সেজবাবু, কিন্তু এখন কি আমাকে তোমার অবিশ্বাস হয় ; অবিশ্বাস র্তাহার প্রতি কোনদিন হয় না, তবু ক্রোধের উপর রমণীবাবু বলিয়া বসিলেন, হয়, একশোবার হয়। তুমি সীতা না সাবিত্রী যে অবিশ্বাস হতে পারে না ? একজনকে ঠকাতে পরেচো, আমাকে পারো না । বিমলবাবু লজ্জায় ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিলেন, ইহাদের কলহের মাঝখানে কথা বলাও চলে না, কিন্তু সবিতা স্থির হইয়া বহুক্ষণ পৰ্য্যস্ত নিঃশব্দে রমণীবাবুর মুখের প্রতি চাহিয়৷ রছিলেন, তারপর বলিলেন, সেজবাবু, তুমি জানো আমি মিছে কথা বলিনে। আমাদের সম্বন্ধ আজ থেকে শেষ হলো । আর তুমি আমার বাড়িতে এসে না। কলহ-বিবাদ ইতিপূৰ্ব্বেও হইয়াছে, কিন্তু সমস্তই এক-তরফ । হাঙ্গামা, চেঁচামেচির ভয়ে চিরদিন সবিতা চুপ কম্বিয় গেছে, পাছে গোপন কথাটা কাহারে কানে ?》