পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্তু একরকম ক’রে রেখেই এসেচি বটে, কিন্তু তোমার হুকুম ছাড়া ত হতে পারবে না। অত্যন্ত আশ্চৰ্য্য হইয়াও জিজ্ঞাসা করিলাম, কিসের দানপত্র ? কাকে কি দিলে ? রাজলক্ষ্মী কহিল, বাড়ি দুটাে ত বস্তুকেই দিয়েচি। শুধু কাশীর বাড়িটা গুরুদেবকে দেব ভেবেচি। আর কোম্পানীর কাগজ, গয়না-টয়নাগুলো ত আমার বুদ্ধি-বিবেচনামত একরকম ভাগ করে এসেচি, এখন শুধু তুমি বললেই— বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না। কহিলাম, তা হলে তোমার নিজের রইল কি ? বন্ধু যদি তোমার ভার না নেয় ? এখন তার নিজের সংসার হ’লো, যদি সে শেষে তোমাকেই খেতে না দেয় ? আমি কি তাই চাইচি নাকি ? নিজের সমস্ত দান ক’রে কি অবশেষে তারই হাততোলা খেয়ে থাকবো ? তুমি ত বেশ ! অধৈৰ্য্য আর সংবরণ করিতে না পারিয়া উঠিয়া বসিয়া ক্রুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিলাম, হরিশচন্দ্রের মত এ দুবুদ্ধি তোমাকে দিলে কে ? খাবে কি ? বুড়ে বয়সে কার গলগ্ৰহ হতে যাবে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, তোমাকে রাগ করতে হবে না, তুমি শোও। আমাকে এ বুদ্ধি যে দিয়েচে, সেই আমাকে খেতে দেবে। আমি হাজার বুড়ে হলেও সে কখনও আমাকে গলগ্রহ ভাববে না। তুমি মিথ্যে মাথা গরম করে না—স্থির হয়ে শোও । স্থির হইয়াই শুইয়া পড়িলাম। সম্মুখেই খোলা জানাল দিয়া অস্তোন্মুখ সূৰ্য্যকররঞ্জিত বিচিত্র আকাশ চোখে পড়িল । স্বপ্নাবিষ্টের মত নির্নিমেন্স-দৃষ্টিতে সেই দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল—এমনি অপরূপ শোভায় সৌন্দর্ঘ্যে যেন বিশ্বভুবন ভাসিয়া যাইতেছে । ত্রিসংসারের মধ্যে রোগ-শোক, অভাব-অভিযোগ, হিংসা-দ্বেষ কোথাও যেন আর কিছু নেই। এই নিৰ্ব্বাক নিস্তব্ধতায় মগ্ন হইয়া যে উভয়ের কতক্ষণ কাটিয়াছিল বোধ করি কেহই হিসাব করি নাই, সহসা দ্বারের বাহিরে মানুষের গলা শুনিয়া দুজনেই চমকিয়া উঠিলাম। এবং রাজলক্ষ্মী শয্যা ছাড়িয়া উঠিবার পূর্বেই ডাক্তারবাবু প্রসন্ন ঠাকুরদাদাকে সঙ্গে লইয়া প্রবেশ করিলেন। কিন্তু সহসা তাহার প্রতি দৃষ্টি পড়িতেই থমকিয়া দাড়াইলেন। ঠাকুরদা যখন দিবানিদ্রা দিতেছিলেন, তখন খবরটা তাহার কানে গিয়াছিল বটে, কে একজন বন্ধু কলিকাতা হইতে গাড়ি করিয়া আমার কাছে আসিয়াছে, কিন্তু সে যে স্ত্রীলোক হইতে পারে, তাহা বোধ করি কাহারও কল্পনায় আসে নাই। সেই জন্যই বোধ হয় এখন পৰ্য্যন্ত বাড়ির মেয়ের কেহ বাহিরে আসে নাই। ঠাকুরদা অত্যন্ত বিচক্ষণ লোক। তিনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টি রাজলক্ষ্মীর আনত » Uፃ