পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झैकोस् সমস্ত ইতিহাস শুনিয়া ডাক্তারবাৰু এমনি খুশী হইয়া গেলেন যে, তৎক্ষণাৎ তার নিজের ঘরের মধ্যে বাকী দুটাে দিন কাটাইবার জন্য সাক্ষরে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। অব সে নিমন্ত্রণ আমি গ্রহণ করিতে পারি নাই,"শুধু ডেকুচোরটা উহার লইয়াছিলাম। & . দুপুরবেলা, ক্ষুধার তাড়নে নিজীবের মত এই কেদারাটার উপরে পড়িয়া ব্ৰহ্মাণ্ডের খাস্তবস্তুর চিন্তা করিতেছি—কোথায় গিয়া কি ফন্দি করিলে যে কিঞ্চিৎ খাদ্য মিলিবে, সেই দুর্ভাবনায় মগ্ন হইয়া আছি, এমন সময়ে খিদিরপুরের সেই মুসলমান দর্জিদের একজন আসিয়া কহিল, বাবুমশায়, একটি বাঙালী মেয়েলোক আপনাকে ডাকৃতেচে ! মেয়েলোক ? বুঝিলাম ইনি টগর । কেন যে ডাকিতেছেন, তাহা অনুমান করা কঠিন হইল না। নিশ্চয়ই মিস্ত্রীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর স্বত্ব-সাব্যস্ত ব্যাপারে আবার মতভেদ ঘটিয়াছে ! কিন্তু আমাকে কেন ? Trial by ordeal ছাড়া বাহিরের লোক আসিয়া কোন দিন যে ইহার মীমাংসা করিয়া দিয়াছে, তাহা মনে করাও ত শক্ত । বলিলাম, ঘণ্টাখানেক পরে যাবে, বল গে। লোকটি কুষ্ঠিতভাবে কহিল, না বাবুমশায়, বড় কাতর হয়ে ডাকৃতেচে– কাতর ? কিন্তু টগর ত আমার কাতর হবার মানুষ নয় ! জিজ্ঞাসা করিলাম, পুরুষমানুষটি কি করচে ? লোকটি কহিল, তেনার বেমারির জন্যেই ত ডাকৃতেচে । বেমারি হওয়া কিছুই আশ্চৰ্য্য নয়—কাজেই উঠিলাম। লোকটি সঙ্গে করিয়া আমাকে নীচে লইয়া গেল। অনেক দূরে এক কোণে কতকগুলা কাছি বিড়ার মত করিয়া রাখা ছিল ; তাহারই আড়ালে একটি বাইশ-তেইশ বছরের বাঙালী মেয়ে যে বসিয়াছিল, তাহা একদিনও আমার চোখে পড়ে নাই। কাছেই একখানি ময়লা সতরঞ্চির উপরে এই বয়সেরই একটি অত্যন্ত ক্ষীণকায় যুবক মড়ার মত চোখ বুজিয়া পড়িয়া আছে -অমুখ ইহারই। আমি নিকটে আসিতে মেয়েটি আস্তে আস্তে মাথার কাপড়টা টানিয়। দিল, কিন্তু আমি ইহার মুখ দেখিতে পাইলাম। সে খুব সুন্দর বলিলে তর্ক উঠবে, কিন্তু তাহ অবহেলা করিবার জিনিস নয়। কারণ, বড় কপাল স্ত্রীলোকের সৌন্দর্ঘ্যের তালিকার মধ্যে স্থান পায় না জানি ; কিন্তু এই তরুণীর প্রশস্ত ললাটের উপর এমন একটু বুদ্ধি ও বিচারের ক্ষমতা ছাপ মারা দেখিতে পাইলাম যাহা কদাচিৎ দেখিয়াছি। আমার অন্নদাদিদির কপালও বড় ছিল—অনেকটা যেন তার মতই। সিথায় সিদূর ডগ ডগ, করিতেছে, হাতে নোয়।

  • २े