পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্ত বাহুবলং। পথের ধারে একটা লোক মোটা মোটা ইক্ষুদণ্ড গাদি করিয়৷ বিক্রি করিতেছিল, অকস্মাৎ তিন জনেই ছুটিয়া গিয়া তিন গাছ হাতে তুলিয়া হতভাগ গাড়োয়ানকে একযোগে আক্রমণ করিলেন। সে কি এলোপাথাড়ি মার! বেচারা স্ত্রীলোকের গায়ে হাত দিতেও পারে না—শুধু আত্মরক্ষা করিতে একে আটকায় ত ওর বাড়ি মাথায় পড়ে, ওকে আটকায় ত তার বাড়ি মাথায় পড়ে । চারিদিকে লোক জমিয়া গেল—কিন্তু সে শুধু তামাশা দেখিতে। সে দুর্তাগার কোথায় গেল টুপি-পাগড়ি, কোথায় গেল হাতের ছিপটি—আর সহ করিতে না পারিয়া সে রণে ভঙ্গ দিয়া পুলিশ ! পুলিশ ! পিয়াদা! পিয়াদা! চীকার করিতে করিতে ছুটিয়া পলাইল । সবে বাঙলা দেশ হইতে আসিতেছি, তাও আবার পাড়াগ হইতে । কলকাতায় স্ত্রা-স্বাধীনতা আছে—কানে শুনিয়াছি, চোখে দেখি নাই । কিন্তু স্বাধীনতা পাইলে ভদ্রঘরের অবলারাও যে একটা জোয়ান-মন্দ পুরুষমানুষকে প্রকাশ্য রাজপথের উপর আক্রমণ করিয়া লাঠি-পেটা করিতে পারে- ক্রমশ: এতখানি সবল৷ হইয়া উঠার সম্ভাবনা আমার কল্পনার অতীত ছিল। অনেকক্ষণ হতবুদ্ধির ন্যায় দাড়াইয়া থাকিয়া স্বকার্য্যে প্রস্থান করিলাম। মনে মনে কহিতে লাগিলাম, স্ত্রী-স্বাধীনতা ভাল কিংবা মন্দ, সমাজে আনন্দের মাত্রা ইহাতে বাড়ে কিংবা কমে— এ বিচার আর একদিন করিব-কিন্তু আজ স্বচক্ষে যাহা দেখিলাম,তাহাতে ত সমস্ত চিত্ত উদভ্ৰান্ত হইয়া গেল । や অভয়া ও রোহিণীদাদাকে তাহদের নূতন বাসায় নৃতন ঘরকন্নার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া যেদিন সকালে নিজের জন্য আশ্রয় খুজিতে রেঙ্গুনের রাজপথে বাহির হইয়া পড়িলাম, সেদিন ওই দুটি লোকের সম্বন্ধে আমার মনের মধ্যে যে একেবারেই কোন গ্লানি স্পর্শ করে নাই, এমন কথা আমি বলিতে চাহি না । কিন্তু এই অপবিত্র চিন্তাটাকে বিদায় করিতেও আমার বেশী সময় লাগে নাই । কারণ কোন দুটি বিশেষ বয়সের নর-নারীকে কোন একটা বিশেষ অবস্থার মধ্যে দেখিতে পাওয়ামাত্রই একটা বিশেষ সম্বন্ধ কল্পনা করা যে কত বড় ভ্রাস্তি—এ শিক্ষা আমার হইয়া গিয়াছিল ; এবং ভবিষ্যতের জটিল সমস্তাও ভবিষ্যতের হাতে ছাড়িয়া দিতে আমার বাধে না। স্বতরাং শুধুমাত্র নিজের ভারটাই নিজের কাধে তুলিয়া লইয়া সেদিন প্রভাতকালে তাহাদের নূতন বাস হইতে বাহির হইয়াছিলাম। এখনকার মত তখনকার দিনে নূতন বাঙালী বৰ্মা মুল্লুকে পদার্পণ করামাত্রই 8 S من سدة ج