পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পথের ওধার দিয়া কি একটা চুটিয়া গেল ? হয়ত কুকুর কিংবা শিয়াল হইবে, কিন্তু তাহার চমক ভাঙ্গিল। পরের জন্ত দুঃখ বোধ করা এমনই অভ্যাসবিরুদ্ধ যে, চমক ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গেই ইহার সমস্ত তামাসাটা একমুহূর্বে ধরা পড়িয়া তাহার ভারি হাসি পাইল। তাড়াতাড়ি রাস্তায় উঠিয়া আসিয়া শুধু বলিল, বা, বেশ ত কাও ! কেউ যদি দেখে ত কি ভাববে! জীবানন্দ আজ মদ না খাইয়াই বাহির হইয়াছিল, তাহার আজিকার এই মনের দুৰ্ব্বলতার হেতু সে বুঝিল, অবসাদগ্ৰস্ত চিত্তের মাঝে কেন যে আজ অকারণে কেবল কান্নার স্বরই বাজিয়া বাজিয়া উঠিতেছে, ইহারও কারণ বুঝিতে তাহার আর বিলম্ব ঘটল না। আরও একটা জিনিস, নিজের সম্বন্ধে আজ তাহার প্রথম সন্দেহ হইল যে, দীর্ঘদিনের অভ্যাস আজ তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ ঘেরিয়া একেবারে স্বভাবে রূপান্তরিত হইয়া দাড়াইয়াছে। আপনাকে আপন বলিয়া দাবী করিবার দাবী হয়ত তাহার চিরদিনের মত হাতের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। কিসের জন্য বাটীর বাহিব হইয়াছিল ঠিক স্মরণ করিতে পারিল না, বোকের মাথায় জোর করিয়া যখন ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়াছিল, তখন স্থ্যি-সংকল্প হয়ত কিছুই ছিল না, হয়ত অগোচরে অস্পষ্টরূপে অনেক কথাই ছিল—যাহ এখন একেবারে লেপিয়া একাকার হইয়া গেল। গৃহত্যাগের কোন উদ্বেগুই মনে পডিল না। কিন্তু গৃহে ফিরিতেও ইচ্ছা করিল না। বিছুদূর অগ্রসর হইয়া বাস্তা ছাড়িয়া পায়ে-হাটা যে পথটা মাঠের উপর দিযে কোণাকুণি চণ্ডীগডের দক্ষিণ ঘুবিধা গিয়াছে অন্ধকারে সেই পথেই সে পা বাড়াইল। পথটা দীর্ঘ এবং বন্ধুব, প্রতি পদক্ষেপেই বাধা পাইতে লাগিল, কিন্তু ধাক্কা খাইয়া, হোচট খাইয়া পথ চলিতে চলিতে বিক্ষিপ্ত চিত্ত-তল তাহার কখন যে ইট, কাঠ, চুন এবং স্বরকির চিন্তায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল, সে জানিতে পারিল না । জিনিসটা কিছুই নয়, ছোট একটা সঁাকো, বীজগ্রামের জমিদারের কাছে তাহার চেয়ে তুচ্ছ বস্তু আর ত কিছু হইতেই পারে না ! সেট তৈরি করার মধ্যে না আছে শিল্প, না আছে সৌন্দর্ঘ্য ; তবুও এই শিল্পসৌন্দর্য্যহীন সামান্ত বস্তুটাই যেন কত দুঃখীর স্থখ-দুঃখের সঙ্গে মিশিয়া তাহার মনের মধ্যে আজ এক নতুন রসে ভরিয়া অসামান্ত হইয়া দেখা দিল । তাহাকে কতপ্রকারে ভাঙিয়া কতরকমে গড়িয়া সে যেন আর শেষ হইতেই চাহিল না। অথচ এ সকল যে শুধু তাহার অবলম্ন মনের ক্ষণস্থায়ী খেয়াল, সত্যবত্ত নয়, কাল দিনের-বেলা ইহার চিহ্নমাত্র রহিবে না, একথাও সে বিশ্বত হইল না, উৎসবের মাঝে গোপন শোকের মত কোথায় যেন বিধিয়াই আহিল। অথচ আজ রাত্রির মত এই ছেলেমান্থটিাকে সে কোনমতেই ছাড়িতে পারিল না, প্রশ্রয় দিয়া দিয়া কল্পনার পরে কল্পনার যোজনা করিয়া অবিশ্রাম চলিতে লাগিল । $*