পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত মুঙ্গেরে তোদের কোন বন্ধু-বান্ধব এমন নেই যে, শুধু মেয়ে দেখে বিয়ে করে ? জমন মেয়ে কিন্তু পাওয়া শক্ত । গিরীন বিষন্নভাবে মৃদু হাসিয়া বলিল, বন্ধু-বান্ধব আর পাবো কোথায় দিদি, তবে টাকা দিয়ে আমি সাহায্য করতে পারি। গিরীনের পিতা ডাক্তারি করিয়া অনেক টাকা এবং বিষয়-সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছেন, সে সমস্তরই এখন সে মালিক । মনোরম বলিলেন, টাকা তুই ধার দিবি ? ধার আর কি দেব দিদি—ইচ্ছে হয় উনি শোধ দেবেন, না হয় নাই দেবেন। মনোরমা বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, তোর টাকা দিয়ে লাভ ? ওরা আমাদের আত্মীয়ও নয়, সমাজের লোকও নয়—এমনি কে কাকে টাকা দেয় ? গিরীন তাহার বোনের মুখের পানে চাহিয়া হাসিতে লাগিল, তার পরে কহিল, সমাজের লোক নাই হলেন, বাঙালী ত ? ওঁর একাস্ত অভাব, আর আমার বিস্তত্ব রয়েচে–তুমি একবার বলে দেখো না দিদি, উনি যদি নিতে রাজি হন, আমি দিতে পারি। ললিতা তাদেরও কেউ নয়, আমাদেরও কেউ নয়—তার বিয়ের সমস্ত খরচ না হয় আমিই দেব। তাহার কথা শুনিয়া মনোরম বিশেষ সন্তুষ্ট হইলেন না । ইহাতে র্তাহার নিজের ক্ষতিবৃদ্ধি কিছুই নাই বটে, তথাপি এত টাকা একজন আর একজনকে দিতেছে দেখিলে অনেকে স্ত্রীলোকই প্রসন্ন-চিত্ত্বে গ্রহণ করিতে পারে না । চারু এতক্ষণ চুপ করিয়া শুনিতেছিল, সে মহা খুশী হইয়া লাফাইয়া উঠিল, বলিল, তাই দাও মামা, আমি সই-মাকে বলে আসচি । তাহার মা ধমক দিয়া বলিলেন, তুই থাম চারু, ছেলেমান্বষ—এ-সব কথায় থাকিসনে বলতে হয় আমিই বলব। গিরীন কছিল, তাই ৰ’লো দিদি। পরশু রাস্তার উপর দাড়িয়েই গুরুচরণবাবুর সঙ্গে একটুখানি আলাপ হয়েছিল, কথায়-বার্তায় মনে হ’লে—বেশ সরল লোক ; তুমি কি বল ? মনোরম বলিলেন, আমিও তাই বলি, সবাই তাই বলে। ওঁর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বড় সাদা-সিদে মানুষ । সেইজন্তেই ত দুঃখ হয় গিরীন, অমন লোকটিকে হয়ত বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাশ্রয় হতে হবে। তার সাক্ষী দেখলিনে গিরীন, শেখরবাৰু ডাকচেন বলতেই ললিতা কি-রকম তাড়াতাড়ি উঠে পালালো, বাড়িম্বদ্ধ লোক ওদের কাছে ধেন বিক্রি হয়ে আছে। কিন্তু যত খোসামোদই করুক না কেন, নবীন রায়ের হাতে গিয়ে একবার যখন পড়েছে, রেহাই পাবে, এ ভরসা কেউ করে না । - ২১৫