পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না, কিন্তু ছোটর তরফ হইতে এ লইয়া বিবাদ করিতে সেদিন কেহই উষ্ঠত হইল | || এমনি করিয়া দিন কাটিতে লাগিল । গুরুচরণের একমাত্র সন্তান বিমলচন্দ্র যে স্বসন্তান নহে, পিতা তাহ ভাল করিয়াই জানিতেন । মাস-কয়েক পূৰ্ব্বে ঘণ্টা কয়েকের জন্য একবার সে বাড়ি আসিয়াছিল, আর তাহার দেখা নাই। সেবার একটা ব্যাগের মধ্যে সে গোপনে কি কতকগুলা রাখিয়া যায় । চলিয়া গেলে গুরুচরণ পরেশকে ডাকিয়া কহিয়াছিলেন, দেখ, ত বাবা কি আছে ওর মধ্যে ? পরেশ পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া বলিয়াছিল, কতকগুলো কাগজপত্র, বোধহয় দলিল-টলিল হবে । জ্যাঠামশাই, এগুলো পুড়িয়ে ফেলি । গুরুচরণ বলিয়াছিলেন, যদি দরকারী দলিল হয় ? পরেশ কহিয়াছিল, দরকারী ত বটেই, কিন্তু বিমলদার পক্ষে বোধ হয় আদরকারী। বিপদের কাজ কি ঘরে রেখে ? গুরুচরণ আপত্তি করিয়া বলিয়াছিলেন, না জেনে নষ্ট করা যায় না পরেশ, কাহারও সৰ্ব্বনাশ হয়ে যেতে পারে। ওগুলো তুই কোথাও লুকিয়ে রেখে দি গে বাবা, পরে যা হয় করা যাবে। এ ঘটনা আর র্তার মনে ছিল না। আজ সকালে গঙ্গা-স্নান করিয়া আসিয়া র"াধিতে যাইতেছিলেন, অকস্মাং সেই ব্যাগ হাতে পরেশ, হরিচরণ, গ্রামের জন কয়েক ভদ্র-ব্যক্তি এবং পুলিশ দারোগা কনস্টেবলের দল আসিয়া উপস্থিত হইল । ঘটনাটা সংক্ষেপে এই যে, বিমল ডাকাতির আসামী, সম্প্রতি ফেরার। খবরের কাগজে খবর পাইয়া পরেশ পুলিশের গোচর করিয়াছে। ব্যাগটা এতদিন তাহার কাছেই ছিল। বিমল মন্দ ছেলে, সে মদ খায়, আনুষঙ্গিক দোষও আছে, কলিকাতায় থাকিয়া কি একটা সামান্য চাকুরি করিয়া সে এই-সব করে। কিন্তু সে ডাকাতি করিতে পারে এ সংশয় পিতার মনের মধ্যে কখনো স্বপ্নেও উদয় হয় নাই । কিছুক্ষণ নির্মিমেয-দৃষ্টিতে পরেশের মুখের প্রতি গুরুচরণ চাহিয়া রহিলেন, তাহার পরে সেই নিম্প্রড অপলক দুই চক্ষের কোণ বহিয়া ঝর ঝর করিয়া জল গড়াইয়া পড়িল ; বলিলেন, সমস্তই সত্যি, পরেশ একটা কথাও মিছে বলেনি । দারোগা আরও গোটা দুই-তিন কথা জিজ্ঞাসা করিয়া তাহাকে ছুটি দিল । যাবার সময় লোকটা হঠাৎ হেঁট হইয় গুরুচরণের পায়ের ধূলা লইয়া বলিল, আপনি বয়সে বড়, ব্রাহ্মণ, আমার অপরাধ নেবেন না। এতবড় দুঃখের কাজ আমি আর কখনো করিনি । আর মাস-কয়েক পরে খবর আসিল, বিমলের সাত বৎসর জেল হইয়াছে। ČNO s