পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কোটর থেকে টেনে তাকে বার করলে । তারপরে জেলে গেলো, দলাদলির আবর্তে পড়ে নাকে-মুখে পাক ঢুকলো, দৈনিক ও সাপ্তাহিক প্রদত্ত নানা বিচিত্র বিশেষণের মালা শিরোপা পেলে, শেষে একদিন যাদের সাংসার চালিয়েছিল তারাই চোর বলে যখন কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলে, তখন সে আর সইলো না, পলিটিক্সে জলাঞ্জলী দিয়ে নিঃশব্দে ফিরে আবার তার লাইব্রেরী-ঘরে এসে আশ্রয় নিলে । কিন্তু দেশোদ্ধারের নেশা তখন পাকা করে ধরেচে, তাই পুরানো বইয়ের মধ্যে আর তার মোতাতের খোরাক মিললো না, আবার তাকে অস্থির করে তুললে। এবার কতকগুলি ছেলেমেয়ে জুটলো—তাবাও তপন পলিটিক্সে তোব করে বেকার হয়ে পড়েছে। বললে, এককড়িদা, রাজনীতি অার না, কিন্তু জীবনটাকে কি নিতান্তই ব্যর্থ করে আনবো, দেশের একটা কাজেও লাগবে না ? এ দুর্গতি থেকে বাচাও—যাতে হোক লাগিয়ে আমাদের দিয়ে তুমি কাজ করিয়ে নাও। এককড়ি রাজী হ’লো। স্থির হ’লে৷ এবারের প্রোগ্রাম সোশাল সার্ভিস। গ্রামে, নগরে, পল্লীতে—সৰ্ব্বত্র কেন্দ্র স্থাপন করা । জলধি বললে, বিদ্যায়, জ্ঞানে, চরিত্রে, অর্জনে, সঞ্চয়ে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন না করতে পারলে ঘরে-ঘরে কেবল বিদ্বেষ আর কলহ দিয়েই সঙ্কট মোচন হবে না। যোগ্য না হলে যোগ্যতার পুরস্কার পাবে কার কাছে ? পেলেই বা থাকবে কেন ? ধনীর কুপুত্রের মতে, বিত্ত সম্পদ যে দেখতে দেখতে লোপ পাবে—চক্ষের পলক সইবে না,— কমলা অস্তহিত হবেন। এ সব যুক্তি শাশ্বত সত্য—অকাট্য। এর বিরুদ্ধে তর্ক চলে না । অতএব প্রতিষ্ঠিত হ’লো কল্যাণ-সঙ্ঘ । গ্রামে গ্রামে প্রসারিত হ’লো শাখাপ্রশাখা। অধ্যক্ষ এককড়ি, সচিব জলধি । নানা শাখার সদস্ত-সংখ্যা দু’শোর বেশি। আজকের দিনে মাসিক অধিবেশনের বৈঠকে সাধারণতঃ হাজিরা যারা হয় সেও জনপঞ্চাশের কম নয়। দূরের সদস্যদের ট্রেন-ভাড়া দেবার ব্যবস্থা আছে। নীচের যে ঘরটার সঙ্ঘের অফিস সেখানে বসে যে মেয়েটি অবিশ্রাম কেরানীর কাজ করে তার নাম মণিমালা। মাসিক ত্রিশ টাকায় সে ভর্তি হয়, সম্প্রতি খুশী হয়ে এককড়ি মাইনে বাড়িয়েছে পঞ্চাশ টাকায়। গোড়ায় এককড়ি তাকে বাড়িতে থাকতেই বলেছিল, কারণ ঘরের অভাব নেই, কিন্তু সে রাজি হয়নি। কাছেই কোথায় তার বাসা—সেখানে নিজে রোধে খায়। একলা থাকে। একটা দিনের জন্যে তার কামাই নেই, একটা কাজে তার শৈথিল্য প্রকাশ পায় না। একদা অসহযোগের প্রবল বস্তায় ভাসতে ভাসতে ঠেকতে ঠেকতে সে এ-অঞ্চলে এসে পড়ে। সঙ্গে বাবা ছিলেন, কিন্তু বুড়ো বয়সে জেলের দুঃখ তার সইলে না—বাইরে এসে যশোর না কোথায় উদরাময়ে মারা গেলেন। মণিমালার প্রাক্তন ইতিবৃত্ত এর বেশি। ৩৪৪