পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ইন্দ্র ব্যাকুল হইয়া কহিল, নতুনদা, এ ষে ভারি স্বস্থিল হ’ল, হাওয়া প’ড়ে গেল। আর ত পাল চলবে না । নতুনদা জবাব দিলেন, এই ছোড়াটাকে দে না দাড় টামুক । কলিকাতাবাসী নতুনদার অভিজ্ঞতায় ইন্দ্র ঈষৎ স্নান হাসিয়া কহিল, দাড় । কারুর সাখি নেই নতুনদা, এই রেত ঠেলে উজোন বয়ে যায়। আমাদের ফিরতে হবে। প্রস্তাব শুনিয়া, নতুনদা এক মুহূৰ্ত্তেই একেবারে অগ্নিশৰ্ম্ম হইয়া উঠিলেন, তবে আনলি কেন হতভাগা । যেমন ক’রে হোক তাকে পৌছে দিতেই হবে। আমায় থিয়েটারে হারমোনিয়াম বাজাতেই হবে—তারা বিশেষ ক’রে ধরেছে। ইন্দ্ৰ কহিল, তাদের বাজাবার লোক আছে নতুনদা। তুমি না গেলেও আটকাবে না । না ! আটকাবে না ? এই মেড়োর দেশের ছেলের বাজাবে হারমোনিয়াম । চল, যেমন ক’রে পারিস নিয়ে চল। বলিয়া তিনি যেরূপ মুখভঙ্গি করিলেন, তাহাতে আমার গা জলিয়া গেল । ইহার বাজনা পরে শুনিয়াছিলাম ; কিন্তু সে কথায় আর প্রয়োজন নাই । ইন্দ্রর অবস্থা-সঙ্কট অনুভব করিয়া আমি আস্তে আস্তে কহিলাম, ইন্দ্র, গুণ টেনে নিয়ে গেলে হয় না ? কথাটা শেষ হইতে না হইতেই আমি চমকাইয়া উঠিলাম। তিনি এমনি দাতমুখ ভ্যাংচাইয়া উঠিলেন যে, সে মুখখানি আমি আজও মনে করিতে পারি। বলিলেন, তবে যাও না, টানো গে না হে । জানোয়ারের মত ব’সে থাকা হচ্ছে কেন ? তার পরে একবার ইন্দ্র, একবার আমি গুণ টানিয়া অগ্রসর হইতে লাগিলাম । কখনো বা উচু পাড়ের উপর দিয়া কখনো বা নীচে নামিয়া এবং সময়ে সময়ে সেই বরফের মত ঠাণ্ডা জলের ধার ঘেষিয়া অভ্যস্ত কষ্ট করিয়া চলিতে হইল। আবার তারই মাঝে মাঝে বাবুর তামাক সাজার জন্য নৌকা থামাইতে হইল। অথচ বাবুটি ঠায় বসিয়া রছিলেন—এতটুকু সাহায্য করিলেন না । ইন্দ্র একবার তাহাকে হালটা ধরিতে বলায় জবাব দিলেন, তিনি রস্তানা খুলে এই ঠাণ্ডায় নিমোনিয়া করিতে পারিবেন না । ইন্দ্র বলিতে গেলো, না খুলে— হ্যা, দামী দস্তানাট মাটি করে ফেলি আর কি ! নে—যা করছিস্ কর । বস্তুত: আমি এমন স্বার্থপর, অসজ্জন ব্যক্তি জীবনে অল্পই দেখিয়াছি । তারই একটা অপদার্থ খেয়াগ চরিতীৰ্থ করিবার জন্য আমাদের এত ক্লেশ সমস্ত চোখে দেখিয়াও তিমি এতটুকু বিচলিত হইলেন না। অথচ আমরা বয়সে র্তাহার অপেক্ষ কতই বা ছোট ছিলাম ! পাছে এতটুকু ঠাও লাগিয়া তাহার অন্মুখ Qę