পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপ্রদাস দ্বিজদাস জোর দিয়া বলিয়া উঠিল, ন ঘটতে পারে না। আপনি নেই,— কোথাও নেই এ আমি ভাবতে পারিনে । তাহার বিশ্বাসের প্রবল তা বিপ্রদাসকে আঘাত করিল, কিন্তু হাসিয়া বলিল, সংসার সবই ঘটে রে, এমন কি অসম্ভবও । এই কথাটা ভাবতে যারা ভয় পায় তারা নিজেদের ঠকায় ! আবার এমনও হতে পারে আমি ক্লাস্ক, আমার ছুটির দরকার,—তবু দিবিনে তুই ? না দাদা, পারবো না দিতে। তার চেয়ে সহজ আপনার আদেশ পালন করা। বলুন, কবে থেকে আমাকে কি করতে হবে। আজ থেকে এ সংসারের সব ভার নিতে হবে । আজ থেকেই ? এতই তাড়াতাড়ি ? বেশ তাই হবে। আপনার অবাধ্য হবো না। এই বলিয়া সে চলিয়া গেল, কিন্তু শুনিতে পাইল দাদার কথা—তোকে বলতে হবে না রে, আমি জান আমার অবাধ্য তুই নয়। দ্বিজদাসের কাজ শুরু হইয়া গেল। সে অলস, অকৰ্ম্মণ্য, উদাসীন এই ছিল সকলের চিরদিনের অভিযোগ। কিন্তু দাদার আদেশে মায়ের ব্রত-প্রতিষ্ঠার স্ববৃহৎ অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করিয়া তুলিবার সর্বপ্রকার দায়িত্ব আসিয়া পড়িল যখন একাকী তাহার পরে তখন এ দুর্নাম অপ্রমাণ করিতে তাহার অধিক সময় লাগিল না। এই অনভ্যস্ত গুরুভার সে যে এত স্বচ্ছনে বহন করিবে এতখানি আশা বিপ্রদাস করে নাই, কিন্তু তাহার নিরলস, স্বশস্থল কৰ্ম্মপটুতায় সে যেন একেবারে বিম্মিত হইয়া গেল। যাহা কিনিয়া পাঠাইবার তাহা গাড়ি বোঝাই করিয়া দ্বিজদাস বাড়ি পাঠাইল, যাহা লইবার তাহা সঙ্গে রাখিল, আত্মীয়-কুটুম্বগণকে একত্র করিয়া যথাযোগ্য সমাদরে রওনা করিয়া দিল, এখানকার সকল কাৰ্য্য সমাধা করিয়া আজ গৃহে ফিরিবার দিন সে দাদার শেষ উপদেশ গ্রহণ করিতে র্তাহার ঘরে ঢুকিয়া দেখিল সেখানে বসিয়া বন্দনা। সেই যাবার দিন হইতে আর সে আসে নাই, তাহার কথা কাজের ভিড়ে দ্বিজদাস ভুলিয়াছিল- আজ হঠাৎ তাহাকে দেখিতে পাইয়া মনে মনে সে আশ্চর্য হইল, কিন্তু সে-ভাব প্রকাশ না করিয়া শুধু একটা মামুলি নমস্কার শিষ্টাচার সারিয়া লইয়া বলিল, দাদা, আজ রাত্রির গাড়িতে আমি বাড়ি যাচ্চি ; সঙ্গে যাচ্চেন অক্ষয়বাবু, তার স্ত্রী ও কস্তা মৈত্রেী। আপনার কলেজের ছাত্ররা বোধ করি কাল-পরশু যাবে,—তাদের ভাড়া দিয়ে গেলুম। অমুদিকে কি সঙ্গে নিয়ে যাবেন ? কিন্তু দিন তিন-চারের বেশি বিলম্ব করবেন না যেন । আমাকে কি যেতেই হবে ? ই। না যান তো একজোড়া খড়ম কিনে দিন, নিয়ে গিয়ে ভরতের ম'তো সিংহাসনে বসাবো । } \d