পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ঢুকিতেছে। ভোলা রামের প্রায় সমবয়সী । নারায়ণী হাসিতে লাগিলেন। ওদিকে মায়ের ক্রুদ্ধ ব্যস্ত ভাব, একদিকে রামের এই পাগলামী, সমস্ত জিনিসটাই তাহার কাছে পরম হাস্যকর ব্যাপার বলিয়া ঠেকিল । হাসিয়া বলিলেন, উঠানের মাঝখানে অশ্বখ গাছ কি হবে রে ? রাম আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, কি হবে কি বৌদি ! কেমন চমৎকার ঠাণ্ডা ছারা হবে বল ত, আর এই যে ছোট ডালটি দেখচ, উটি বড় হলে—এই গোবিন, আঙ্গুল দেখাস্নে—বড় হলে গোবিদের জন্যে একটা দোলা টাঙিয়ে দেব। ভোলা, একটু উচু করে বেড়া দিতে হবে, নইলে কালী গলা বাড়িয়ে খেয়ে নেবে ; দে, কাটারীখান, আমার হাতে দে, তুই পারবিনে । খটু-খট্‌ ঠক্‌-ঠক করিয়া বাশ কাটা সুরু হইয়া গেল । নারায়ণী হাসিতে হাসিতে কক্ষস্থিত পূৰ্ণকলস রান্নাঘরে রাখিয়া দিতে চলিখ গেলেন । রাগে দিগম্বরীর চোখ জুলিতে লাগিল। মেয়ের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, তুই যে কিছু বললিনে ? ঐখানে তবে অশ্বখ গাছ হোক। নারায়ণী হাসিয়া বলিলেন, মা, ব্যস্ত হ’চ্চ কেন, অত বড় গাছ কখন হয় ? ওর কি শেকড়-বাকড় আছে যে ঘড়া ঘড়া জল ঢাললেই বঁাচবে ? ও ত কালই শুকিয়ে যাবে } দিগম্বরী কিছুমাত্র শাস্ত না হইয়া বলিল, শুকুবে মা ছাই হবে, ভাল চাস্ত উপড়ে ফেলে’দে গে ! নারায়ণী শঙ্কিত হইয়া বলিলেন, বাপরে | তা হ’লে আর কারো রক্ষে থাকবে না। দিগম্বরী বলিলেন, কেন, বাড়ি কি ওর একলার যে মনে করলেই উঠোনের মাঝখানে এক অশ্বখ গাছ পুতে দেবে ? তোরা কি কেউ না ? আমার গোবিন্দ কি কেউ নয় ? মা গো, অশ্বখ গাছের উপরে এসে রাজ্যের কাক, চিল, শকুনি বাসা করবে, হাড়-গোড় ফেলে নোঙর করবে—আমি ত নারাণি, তা হলে থাকতে পারব না। ওকে তোদের এত ভয়টা কি জন্তে শুনি ? আমার যদি বাড়ি হ’ত নারাণি, তা হলে দেখতুম, ও কতবড় বজাত। একদিনে সোজা করে দিতুম। নারায়ণী মায়ের বুকের ভিতরটা যেন দর্পণের মত স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া জোর করিয়া হাসিয়া বলিলেন, ছেলেমানুষ, ওর এখন কি বুদ্ধি মা ! বুদ্ধি থাকলে কি কেউ নিজের বাড়ির উঠোনে অশ্বখ গাছ পোতে। দুদিন থাক, তার পরে ও আপনিই ফেলে দেবে। দিগম্বরী বলিলেন, ফেলে দেবে। ও কেন দেবে, আমি নিজেই দেব। মায়ায়ণী কহিলেন, না মা, ও কাজ করে না, তোমাকে বলচি, ওকে চেন Rybn