পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহদাহ জয় । খুব সম্ভব রাত্রে হিম লেগে দুশ্চিন্তায় পরিশ্রমে নানা কারণে এই অস্থখটি হয়েছে। বলিয়া স্বরেশের পিসিকে উদ্দেশ করিয়া পুনশ্চ কহিলেন, আমি ভেবে সারা হয়ে যাচ্ছি, এদের পঠিয়ে পৰ্যন্ত সে একটা সংবাদ দিলে না কেন ? স্বরেশ আমার দীর্ঘজীবী হোক, সে গিয়ে বুদ্ধি করে তাকে এখানে না এনে ফেললে কি যে হ’তো তা ভগবানই জানেন । বলিয়া সস্নেহ অনুতাপে বৃদ্ধের গলা ধরিয়া আসিল । অচলা নিঃশব্দে নতমুখে দাড়াইয়া সমস্ত শুনিল, কোন প্রশ্ন করিল না, কিছুমাত্র চাঞ্চল্য প্রকাশ করিল না । স্বরেশের পিসিমা অচলার বাহুর উপর তাহার ডান হাতখানি রাখিয়া শান্ত মৃদুকণ্ঠে বলিলেন, ভয় নেই মা, সে দু’দিনেই ভাল হয়ে যাবে । - অচলা কোন কথা না কহিয়া তাহাকে আর একবার নত হইয়া প্রণাম করিয়া আলনা হইতে শুধু গায়ের কাপড়খানি টানিয়া লইয়া যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া দাড়াইল । پ۔ এই শীতের অপরারে ঠাণ্ডার মধ্যে তাহাকে কিছুমাত্র গরম জাম-কাপড় না লইয়া, খালি পায়ে অনভ্যস্ত সাজে বাহিরে যাইতে উদ্যত দেখিয়া বৃদ্ধ পিতার বুকে বাজিল ; কিন্তু পুরোবৰ্ত্তী ওই বিধবার সজ্জার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া আর তাহার বাধা দিতে প্রবৃত্তি হইল না। তিনি শুধু কেবল বলিলেন, চল মা, আমিও সঙ্গে যাচ্ছি ; বলিয়া চটিজুতা পায়ে দিয়াই সকলের অগ্রে সিড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া চলিলেন । ২৩ মহিমের প্রতি অচলার সকলের চেয়ে বড় অভিমান এই ছিল যে, স্ত্রী হইয়াও সে একটি দিনের জন্যও স্বামীর দুঃখ-দুশ্চন্তার অংশ গ্রহণ করিতে পায় নাই। এই লইয়া স্বরেশও বন্ধুর সহিত ছেলেবেলা হইতে অনেক বিবাদ করিয়াছে, কিন্তু কোন ফল হয় নাই। রুপণের ধনের মত মহিম এই বস্তুটিকে সমস্ত সংসার হইতে চিরদিন এমনি একান্ত করিয়া আগলাইয়া ফিরিয়াছে যে, তাহাকে দুঃখে দুঃসময়ে কাহারও সাহায্য করা দূরে থাক, কি যে তাহার অভাব, কোথায় যে তাহার ব্যথা, ইহাই কোনদিন কেহ ঠাহর করিতে পারে নাই । স্বতরাং বাড়ি যখন পুড়িয়া গেল, তখন সেই পিতৃপিতামহের ভস্মীভূত গৃহযুপের প্রতি চাহিয়া মহিমের বুকে যে কি শেল বিধিল, তাহার মুখ দেখিয়া অচলা অনুমান করিতে পারিল না। মৃণালের বৈধব্যেও স্বামীর দুঃখের পরিমাণ করা তাহার তেমনি }\to ۹ سه