পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন সব চেয়ে বেশি, যেখানে প্রীতি সব চেয়ে গভীর, পাপের আঘাত সেইখানেই যে গিয়ে বাজে। যার হৃদয় কঠিন সে তো বেদনা অনুভব করে না । কারণ, সে যদি বেদনা পেত তবে পাপ এমন নিদারুণ হতেই পারত না । যার হৃদয় কোমল, যার প্রেম গভীর, তাকেই সমস্ত বেদনা বইতে হবে। এইজন্য যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের রক্তপাত কঠিন নয়, রাজনৈতিকদের দুশ্চিন্তা কঠিন নয়, কিন্তু ঘরের কোণে যে রমণী অশ্রবিসর্জন করছে তারই আঘাত সব চেয়ে কঠিন । সেইজন্য এক-একসময় মন এই কথা জিজ্ঞাসা করে— যেখানে পাপ সেখানে কেন শাস্তি হয় না ? সমস্ত বিশ্বে কেন পাপের বেদনা কম্পিত হয়ে ওঠে ? কিন্তু, এই কথা জেনো যে, মানুষের মধ্যে কোনো বিচ্ছেদ নেই, সমস্ত মানুষ যে এক। সেইজন্য পিতার পাপ পুত্রকে বহন করতে হয়, বন্ধুর পাপের জন্য বন্ধুকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, প্রবলের উৎপীড়ন দুর্বলকে সহ্য করতে হয় । মানুষের সমাজে একজনের পাপের ফলভোগ সকলকেই ভাগ করে নিতে হয় ; কারণ, অতীতে ভবিষ্যতে, দূরে দূরাস্তে, হৃদয়ে হৃদয়ে, মানুষ যে পরস্পরে গাথা হয়ে আছে । মানুষের এই ঐক্যবোধের মধ্যে যে গৌরব আছে তাকে ভুললে চলবে না। এইজন্যই আমাদের সকলকে দুঃখভোগ করবার জন্য প্রস্তুত হতে হবে । তা না হলে প্রায়শ্চিত্ত হয় না— সমস্ত মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত সকলকেই করতে হবে । যে হৃদয় প্রীতিতে কোমল দুঃখের আগুন তাকেই আগে দগ্ধ করবে। তার চক্ষে নিদ্রা থাকবে না। সে চেয়ে দেখবে দুর্যোগের রাত্রে দূর দিগন্তে মশাল জলে উঠেছে, বেদনায় মেদিনী কম্পিত করে রুদ্র আসছেন— সেই বেদনার আঘাতে 8 e V)