পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাপ
১৩

কোনো বাধা দিচ্ছে না, কারও চোখে পড়ছে না; কিন্তু শিকড়গুলো সমস্তই ভিতরে রয়ে গেছে, তারা পরস্পরে ভিতরে ভিতরে জড়াজড়ি করে একেবারে জাল বুনে রেখেছে, আধ্যাত্মিক চাষ-আবাদে সেখানে পদে পদে ঠেকে যেতে হয়। অতিক্ষুদ্র অতিসূক্ষ্ম শিকড়টিও জড়িয়ে ধ’রে আবরণ রচনা করে। তখন পূর্বে যে পাপটি চোখে পড়ে নি তাকেও দেখতে পাই এবং পাপ জিনিসটা আমাদের পরম সার্থকতার পথে যে কিরকম বাধা তাও বুঝতে পারি। তখন মানুষের দিকে না তাকিয়ে, কোনো সামাজিক প্রয়োজনের দিকে না তাকিয়ে, পাপকে কেবল পাপ বলেই সমস্ত অন্তঃকরণের সঙ্গে ঠেলা দিতে থাকি— তাকে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠে। সে যে চরম মিলনের, পরম প্রেমের পথ দলবল নিয়ে জুড়ে বসে আছে— তার সম্বন্ধে অন্যকে বা নিজেকে ফাঁকি দেওয়া আর চলবে না— লোকের কাছে ভালো হয়ে আর কোনো সুখ নেই— তখন সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে সেই নির্মলস্বরূপকে বলতে হবে: বিশ্বানি দুরিতানি পরাস্থব। সমস্ত পাপ দূর করো, একেবারে বিশ্বদুরিত সমস্ত পাপ— একটুও বাকি থাকলে চলবে না— কেননা, তুমি শুদ্ধং অপাপবিদ্ধং— আত্মা তোমাকেই চায়, সেই তার একমাত্র যথার্থ চাওয়া, সেই তার শেষ চাওয়া। হে সর্বগ, তোমাকে, সর্বতঃ প্রাপ্য, সকল দিক থেকে পেয়ে যুক্তাত্মা হব, সকলের মধ্যেই প্রবেশ লাভ করব, সেই আশ্চর্য সৌভাগ্যের ধারণাও এখন আমার মনে হয় না। কিন্তু এই অনুগ্রহটুকু করতে হবে যে, তোমার পরিপূর্ণ প্রকাশের অধিকারী নাই হই তবু আমার রুদ্ধদ্বারের ছিদ্র দিয়ে তোমার সেইটুকু আলোক আসুক যে আলোকে ঘরের আবদ্ধ অন্ধকারকে আমি অন্ধকার বলে জানতে পারি। রাত্রে দ্বার জানালা বন্ধ করে অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে ছিলুম। সকালবেলায় দ্বারের ফাঁক দিয়ে যখন আলো ঢুকল তখন জড়শষ্যায় পড়ে থেকে হঠাৎ বাইরের সুনির্মল প্রভাতের আবির্ভাব