পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭ જે ર শান্তিনিকেতন চৈতন্তময়তার দ্বারা সেই জড় সংস্কারকে সে লোক কাটিয়ে উঠেছে— এইজন্যে নদীর জলের সঙ্গে কেবলমাত্র তার শারীরিক ব্যবহারের বাহ সংস্রব ঘটে নি, তার সঙ্গে তার চিত্তের যোগসাধন হয়েছে। এই নদীর ভিতর দিয়ে পরমচৈতন্য তার চেতনাকে একভাবে স্পর্শ করেছেন। সেই ম্পর্শের দ্বারা স্নানের জল কেবল তার দেহের মলিনতা নয়, তার চিত্তেরও মোহপ্রলেপ মার্জন করে দিচ্ছে । অগ্নি জল মাটি অন্ন প্রভৃতি সামগ্রীর অনন্ত রহস্ত পাছে অভ্যাসের দ্বারা আমাদের কাছে একেবারে মলিন হয়ে যায় এইজন্যে প্রত্যহই নানা কর্মে নানা অনুষ্ঠানে তাদের পবিত্রতা আমাদের স্মরণ করবার বিধি আছে । যে লোক চেতনভাবে তাই স্মরণ করতে পারে, তাদের সঙ্গে ষোগে ভূমীর সঙ্গে আমাদের যোগ এ কথা যার বোধশক্তি স্বীকার করতে পারে, সে লোক খুব একটি মহৎ সিদ্ধি লাভ করেছে। স্বানের জলকে, আহারের অল্পকে, শ্রদ্ধা করবার যে শিক্ষা সে মূঢ়তার শিক্ষা নয় ; তাতে জড়ত্বের প্রশ্রয় হয় না ; কারণ, এই-সমস্ত অভ্যস্ত সামগ্রীকে তুচ্ছ করাই হচ্ছে জড়তা, তার মধ্যেও চিত্তের উদবোধন এ কেবল চৈতন্যের বিশেষ বিকাশেই সম্ভবপর। অবশু, যে ব্যক্তি মূঢ়, সত্যকে গ্রহণ করতে যার প্রকৃতিতে স্থূল বাধা আছে, সমস্ত সাধনাকেই সে বিকৃত করে এবং লক্ষ্যকে সে কেবলই ভুল জায়গায় স্থাপন করতে থাকে এ কথা বলাই বাহুল্য। বহুকোটি লোক, প্রায় একটি সমগ্র জাতি, মৎস্য-মাংস-আহার একেবারে পরিত্যাগ করেছে— পৃথিবীতে কোথাও এর তুলনা পাওয়া যায় না। মাহুষের মধ্যে এমন জাতি দেখি নে যে আমিষ আহার না করে । ভারতবর্ষ এই-যে আমিষ পরিত্যাগ করেছে সে কৃচ্ছ ব্রতসাধনের জন্যে নয়, নিজের শরীরকে পীড়া দিয়ে কোনো শাস্ত্রোপদিষ্ট পুণ্য