বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আলোয়; অকাল-অবসানের অবসাদ আর্দ্র হাওয়ার মধ্যে।

 এমন সময়, বেলা তখন নটা, অমিত দুমদাম-শব্দে ঘরে ঢুকেই 'মাসিমা মাসিমা' করে ডাক দিলে। যোগমায়া প্রাতঃ-সন্ধ্যা সেরে ভাড়ারের কাজে প্রবৃত্ত। আজ তাঁরও মনটা পীড়িত। অমিত তার কথায় হাসিতে চাঞ্চল্যে এতদিন তার স্নেহাসক্ত মনকে, তাঁর ঘরকে ভরে রেখেছিল। সে চলে গেছে এই ব্যথার বোঝা নিয়ে তার সকালবেলাটা যেন বৃষ্টিবিন্দুর ভারে সদ্যপাতী ফুলের মতো নুয়ে পড়ছে। তাঁর বিচ্ছেদকাতর ঘরকন্নার কাজে আজ তিনি লাবণ্যকে ডাকেন নি; বুঝেছিলেন আজ তার দরকার ছিল একলা থাকার, লোকের চোখের আড়ালে।

 লাবণ্য তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল, কোলের থেকে বই গেল পড়ে, জানতেও পারলে না। এ দিকে যোগমায়া ভাড়ার-ঘর থেকে দ্রুতপদে বেরিয়ে এসে বললেন, 'কী বাবা অমিত, ভূমিকম্প নাকি?'

 'ভূমিকম্পই তো। জিনিসপত্র রওনা করে দিয়েছি; গাড়ি ঠিক; ডাকঘরে গেলুম দেখতে চিঠিপত্র কিছু আছে কি না। সেখানে এক টেলিগ্রাম।'

 অমিতর মুখের ভাব দেখে যোগমায়া উদ্‌বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘খবর সব ভালো তো?'

 লাবণ্যও ঘরে এসে জুটল। অমিত ব্যাকুল মুখে বললে, ‘আজই সন্ধেবেলায় আসছে সিসি আমার বোন, তার বন্ধু কেটি মিত্তির, আর তার দাদা নরেন।'

 'তা, ভাবনা কিসের বাছা? শুনেছি, ঘোড়দৌড়ের মাঠের

১৩২