বাবা মারা গেছেন।
মারা গেছেন! মা?
তিনি আগেই গেছেন।
ওঃ—তাইতেই, বলিয়া বাইজী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আমার মুখপানে চাহিয়া রহিল। একবার মনে হইল, তাহার চোখ দুটি যেন ছলছল করিয়া উঠিল। কিন্তু সে হয়ত আমার মনের ভুল। পরক্ষণেই যখন সে কথা কহিল, তখন আর ভুল রহিল না যে, এই মুখরা নারীর চটুল ও পরিহাস-লঘু কণ্ঠস্বর সত্য সত্যই মৃদু ও আর্দ্র হইয়া গিয়াছে। কহিল, তা হ’লে যত্নটত্ন করবার আর কেউ নেই, বল। পিসিমার ওখানেই আছ ত? নইলে আর থাক্বেই বা কোথায়? বিয়ে হয়নি, সে ত দেখতেই পাচ্চি। পড়াশুনা কর্চ? না, তাও ঐ সঙ্গে শেষ ক’রে দিয়েচ?
এতক্ষণ পর্য্যন্ত ইহার কৌতূহল এবং প্রশ্নমালা আমি যথাসাধ্য সহ্য করিয়া গিয়াছি। কিন্তু এই শেষ কথাটা কেমন যেন হঠাৎ অসহ্য হইয়া উঠিল। বিরক্ত এবং রুক্ষকণ্ঠে বলিয়া উঠিলাম, আচ্ছা, কে তুমি? তোমাকে জীবনে কখনো দেখেচি ব’লেও ত মনে হয় না। আমার সম্বন্ধে এত কথা তুমি জান্তে চাইচই বা কেন? আর জেনেই বা তোমার লাভ কি।
বাইজী রাগ করিল না, হাসিল; কহিল, লাভ-ক্ষতিই কি সংসারে সব? মায়া, মমতা, ভালবাসাটা কি কিছু নয়? আমার নাম পিয়ারী, কিন্তু আমার মুখ দেখেও যখন চিন্তে পার্লে না, তখন ছেলেবেলার ডাকনাম শুনেই কি আমাকে চিন্তে পার্বে? তা ছাড়া আমি তোমাদের—ও গ্রামের মেয়েও নই।
আচ্ছা তোমাদের বাড়ী কোথায় বল?