বঙ্কু অগত্যা শয্যা ত্যাগ করিয়া, মুখ হাত ধুইয়া কাপড় ছাড়িয়া ষ্টেশনে চলিয়া গেল। তখন সবেমাত্র সকাল হইতেছিল—ঘরে আর কেহ ছিল না। ধীরে ডাকিলাম, পিয়ারী! আমার শিয়রের দিকে আর একখানা খাটিয়া জোড়া দেওয়া ছিল। তাহারই উপর ক্লান্তিবশতঃ বোধ করি সে ইতিমধ্যে একটুখানি চোখ বুজিয়া শুইয়াছিল। ধড়-মড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া আমার মুখের উপর ঝুঁকিয়া পড়িল। কোমলকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, ঘুম ভাঙ্ল?
আমি ত জেগেই আছি। পিয়ারী উৎকণ্ঠিত যত্নের সহিত আমার মাথায়, কপালে হাত বুলাইয়া দিতে দিতে কহিল, জ্বর এখন খুব কম। একটুখানি চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা কর না কেন?
তা ত বরাবরই কর্চি পিয়ারী! আজ জ্বর আমার কদিন হ’ল?
তেরো দিন, বলিয়া সে কতই যেন একটা বর্ষীয়সী প্রবীণার মত গম্ভীরভাবে কহিল, দেখ, ছেলেপিলেদের সাম্নে আর আমাকে ও ব’লে ডেকো না। চিরকাল লক্ষ্মী ব’লে ডেকেচ, তাই কেন বল না?
দিন-দুই হইতেই পূর্ণ সচেতন ছিলাম। আমার সমস্ত কথাই স্মরণ হইয়াছিল। বলিলাম, আচ্ছা। তারপরে যাহা বলিবার জন্য ডাকিয়াছিলাম, মনে মনে সেই কথাগুলি একটু গুছাইয়া লইয়া বলিলাম, আমাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা কর্চ, কিন্তু তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আর দিতে চাইনে।
তবে কি কর্তে চাও?
আমি ভাবছি এখন যেমন আছি, তাতে তিন-চারদিনেই বোধ হয় একরকম সেরে যাবো। তোমরা বরঞ্চ এই কটা দিন অপেক্ষা ক’রে বাড়ী যাও।
তখন তুমি কি করবে শুনি?