তিনি দাঁত খিঁচাইয়া বলিলেন, আবার শ্রী—কান্ত—! শুধু কান্ত। নে, তামাক সাজ্। ইন্দ্র, হুঁকো-কলকে রাখ্লি কোথায়? ছোঁড়াটাকে দে—তামাক্ সাজুক!
ওরে বাবা! মানুষ চাকরকেও ত এমন বিকট ভঙ্গি করিয়া আদেশ করে না! ইন্দ্র অপ্রতিভ হইয়া কহিল, শ্রীকান্ত, তুই এসে একটু হাল ধর, আমি তামাক সাজ্চি।
আমি তাহার জবাব না দিয়া তামাক সাজিতে লাগিয়া গেলাম। কারণ, তিনি ইন্দ্রর মাস্তুত ভাই, কলিকাতার অধিবাসী এবং সম্প্রতি এল-এ পাশ করিয়াছেন। কিন্তু মনটা আমার বিগড়াইয়া গেল। তামাক সাজিয়া হুকা হাতে দিতে, তিনি প্রসন্ন-মুখে টানিতে টানিতে প্রশ্ন করিলেন, তুই থাকিস্ কোথায় রে কান্ত? তোর গায়ে ওটা কালপানা কি রে? র্যাপার? আহা, র্যাপারের কি শ্রী? তেলের গন্ধে ভূত পালায়। ফুটচে—পেতে দে দেখি, বসি।
আমি দিচ্চি নতুনদা। আমার শীত কর্চে না—এই নাও; বলিয়া ইন্দ্র নিজের গায়ের আলোয়ানটা তাড়াতাড়ি ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিল। তিনি সেটা জড়ো করিয়া লইয়া বেশ করিয়া বসিয়া সুখে তামাক টানিতে লাগিলেন।
শীতের গঙ্গা। অধিক প্রশস্ত নয়—আধঘণ্টার মধ্যেই ডিঙি ওপারে গিয়া ভিড়িল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বাতাস পড়িয়া গেল।
ইন্দ্র ব্যাকুল হইয়া কহিল, নতুনদা, এ যে ভারি মুস্কিল হ’ল, হাওয়া প’ড়ে গেল। আর ত পাল চল্বে না।
নতুনদা জবাব দিলেন, এই ছোঁড়াটাকে দে না, দাঁড় টানুক। কলিকাতাবাসী নতুনদাদার অভিজ্ঞতায় ইন্দ্র ঈষৎ ম্লান হাসিয়া কহিল, দাঁড়! কারুর সাধ্যি নেই নতুনদা, এই রেত ঠেলে উজোন বয়ে যায়। আমাদের ফির্তে হবে!