বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লহর } মধ্য-মণি । ১৬১ তিনি জয়স্তিয়াপতির প্রতি ক্ষমা প্রদর্শনার্থ মহারাজ বিজয়কে পত্রদ্বারা অনুরোধ করিলেন। বিজয়মাণিক্য জয়ন্তিয়া হইতে হাড়ি সৈন্য ফিরাইয়া আনিয়া হেড়ম্বেশ্বরের অনুরোধের মর্য্যাদা রক্ষা করিয়াছিলেন । * এই সময় জয়ন্তিয়ার (খাসিয়ার) রাজা কে ছিলেন, জানা আবশ্যক । পুরাবৃত্ত an, আলোচনায় জানা যায়, জয়ন্তিয়া নারীদেশ বলিয়া জৈমিনি ভারতে জয়স্তিয়া রাজ কে ? উক্ত হইয়াছে । এই প্রদেশের অধীশ্বরী বীরাঙ্গন প্রমীলার সহিত অৰ্জুনের যুদ্ধ হইয়াছিল। তদবধি সুদীর্ঘ কাল জয়ন্তিয়া রাজ্য হিন্দুরাজা কর্তৃক শাসিত হইয়াছে। তৎপর খস ও সিণ্টেঙ্গ প্রভৃতি পার্বত্য জাতিগণ কর্তৃক হিন্দু রাজ্যের বিলোপ ঘটে ; এবং জনৈক পার্বর্বত্য সরদার জয়ন্তিয়া প্রদেশের শাসন দণ্ড ধারণ করেন, তাহার নাম পৰ্ব্বত রায় গেইট সাহেবের মতে ১৫০০ খৃষ্টাব্দে এই ঘটন সঙ্ঘটিত হইয়াছিল । পৰ্ববত রায়ের পরে, মাঝ গোসাঞি (১৫১৬–১৫৩২ খৃঃ), বুড়া পৰ্ববত রায় (১৫৩২—১৫৪৮ খৃঃ), বড় গোসাঞি (১৫৪৮–১৫৬৪ খৃঃ), রাজত্ব করিয়াছেন। নারায়ণ ১৬১০ খৃঃ অব্দে হেড়ম্বের রাজপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি কোন সন হইতে কোন সন পৰ্য্যন্ত রাজত্ব করিয়াছিলেন, গেইট সাহেব তাহ বলেন নাই। শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশের উপসংহারে লিখিত আছে ;—“কেবল জয়ন্তিয়াপতি নহে, বীরবর শত্রুদমন আহোম নৃপতি প্রতাপ সিংহকে পরাজয় করেন, এবং স্বয়ং প্রতাপ নারায়ণ নাম ধারণ পুৰ্ব্বক রাজধানী মাইবঙ্গকে কীৰ্ত্তিপুর নামে অভিহিত করেন। ইনিই কাছাড় রাজবংশাবলীতে নির্ভয় নারায়ণ নামে কথিত হইয়াছেন।” এই উক্তিদ্বারা জানা যাইতেছে, গেইট সাহেবের কথিত শত্রুদমন বা প্রতাপ নারায়ণ এবং রাজমালার নির্ভয় নারায়ণ অভিন্ন ব্যক্তি। বিজয়মাণিক্য ১৫২৮ হইতে ১৫৭০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত রাজত্ব করিয়াছেন। নির্ভয় নারায়ণ ১৬১০ খৃষ্টাব্দে কাছাড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকিবার কথা ইতিপূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে ; তিনি ইহার কতিপয় বৎসর পূৰ্ব্বে রাজ্য লাভ করিয়াছিলেন, এরূপ অনুমান করা অসঙ্গত হইবে না। সুতরাং ত্রিপুরেশ্বর বিজয়মাণিক্য ও হেড়ম্বের অধিপতি নির্ভয় নারায়ণ সমসাময়িক ছিলেন, এরূপ নিৰ্দ্ধারণ করা যাইতে পারে। কৈলাস বাবুর রাজমালায় কাছাড় (হেড়ম্ব) রাজগণের যে বংশলতা সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহাতে নির্ভয় নারায়ণ, পাণ্ডুপুত্র ভীমের অধস্তন ৫৩ স্থানীয় বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। এই নিৰ্দ্ধারণ নিতান্তই অযৌক্তিক। যিনি ১৬১০ খৃষ্টাব্দে রাজত্ব করিয়াছিলেন, তিনি মহাভারতোক্ত ভীমসেনের অধস্তন ৫৩ স্থানীয় হইতে পারেন না । ত্রিপুরেশ্বর বিজয়মাণিক্য, মহারাজ ত্রিপুরের অধস্তন ১০৮ স্থানীয় । ত্রিপুর, যুধিষ্ঠিরের সমসাময়িক রাজা, সুতরাং নির্ভয় মারায়ণকে ভীমের অধস্তন ৫৩ স্থানীয় ধরা হইলে, তিনি বিজয়মাণিক্যের সমসাময়িক অথবা ১৬১০ খৃঃ অব্দের রাজা হইতে পারেন না। এই কারণে কৈলাস বাবুর নিদ্ধারণ প্রমাদমূলক সাব্যস্ত হইতেছে।

  • এতদ্বিষয়ক বিবরণ শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ, চতুর্থ খণ্ড, প্রথম অধ্যায়ে এবং কৈলাস বাবুর রাজমালার ২য় ভাগ, ৪র্থ অধ্যায়ে বিশেষভাবে বর্ণিত হইয়াছে।