পাতা:শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত প্রথম ভাগ.djvu/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
[ গৃহস্থের প্রতি উপদেশ। ]

 সমবেত ব্রাহ্মভক্তগণকে সম্বোধন করিয়া তিনি বলিতেছেন—"নিলিপ্ত হয়ে সংসার করা বড় কঠিন। প্রতাপ বলেছিল, মহাশয়, আমাদের জনক রাজার মত। জনক নিলিপ্ত হ’য়ে সংসার করেছিলেন, আমরাও তাই করবে। আমি বল্লম; মনে করলেই কি জনক রাজা হওয়া যায়? জনকরাজা কত তপস্ত ক’রে জ্ঞান লাভ করেছিলেন! হেটমুগু উৰ্দ্ধপদ হ’য়ে অনেক বৎসর ঘোরতর তপস্যা ক’রে, তবে সংসারে ফিরে গিছলেন।”

 “তবে সংসারীর কি উপায় নাই?—ই, অবশু আছে। দিনকতক নির্জনে সাধন কর্ত্তে হয়। নির্জনে ক’ল্পে ভক্তিলাভ হয়, জ্ঞানলাভ হয়; তারপর গিয়ে ংসার কর, দোষ নাই। যখন নির্জনে সাধন ক’বৃবে তখন সংসার থেকে একবারে তফাতে যাবে; তখন যেন স্ত্রী, পুত্র, কন্য, মাত, পিতা, ভাই, ভগিনী, আত্মীয় কুটুম্ব কেহ কাছে না থাকে। নির্জনে সাধনের সময় ভাব বে, আমার কেউ নাই; ঈশ্বরই আমার সর্বস্ব। আর কেঁদে কেঁদে র্তার কাছে জ্ঞান ভক্তির জন্য প্রার্থনা করবে।

 “যদি বল, কত দিন নির্জনে সংসার ছেড়ে থাকবে? তা এক দিন যদি এই রকম ক’রে থাক, সেও ভাল; তিন দিন থাকলে, আরও ভাল; বা বারোদিন, এক মাস, তিন মাস, এক বৎসর, যে যেমন পারে। জ্ঞান ভক্তি লাভ ক’রে, সংসার করলে, আর বেশী ভয় নাই।

 “হাতে তেল মেথে কাটাল ভাঙ্গলে হাতে আটা লাগে না। চোর চোর যদি খেল, বুড়ী ছুয়ে ফেল্পে আর ভয় নাই। একবার পরশমণিকে ছুয়ে সোণ হও, সোণ হবার পর হাজার বৎসর যদি মাটীতে পোত থাক, মাটী থেকে তোলবার পর সেই সোণাই থাকবে।

 মনটা দুধের মত। সেই মনকে যদি সংসার জলে রাখ, তা হ’লে দুধে জলে মিশে যাবে, তাই দ্বধকে নির্জনে দই পেতে মাখন তুলতে হয়। মন-দুধ। থেকে, যখন নির্জনে সাধন করে, জ্ঞান-ভক্তিরূপ মাখন তোলা হলে, তখন সেই মাখন অনায়াসে সংসার-জলে রাখা যায়। সে মাখন কখনও সংসার জলের সঙ্গে মিশে যাবে ন—সংসার জলের উপর নির্লিপ্ত হয়ে ভাসবে।” |