বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭২
সংকলন

প্রচলিত— কিন্তু এমনতরো সার্বজনীন রসবোধের সাধনা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে দেশের সমস্ত লোক সুন্দরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

 তাতে কি এরা বিলাসী হয়েছে। অকর্মণ্য হয়েছে? জীবনের কঠিন সমস্যা ভেদ করতে এরা কি উদাসীন কিম্বা অক্ষম হয়েছে।— ঠিক তার উলটো। এরা এই সৌন্দর্যসাধনা থেকেই মিতাচার শিখেছে। এই সৌন্দর্যসাধনা থেকেই এরা বীর্য এবং কর্মনৈপুণ্য লাভ করেছে।

জাপানী ছবি

 হারার বাড়িতে টাইক্কানের ছবি যখন প্রথম দেখলুম, আশ্চর্য হয়ে গেলুম। তাতে না আছে বাহুল্য, না আছে শৌখিনতা। তাতে যেমন একটা জোর আছে, তেমনি সংযম। বিষয়টা এই; চীনের একজন প্রাচীন কালের কবি ভাবে-ভোর হয়ে চলেছে— তার পিছনে একজন বালক একটি বীণাযন্ত্র বহু যত্নে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে তার নেই; তার পিছনে একটি বাঁকা উইলো গাছ। জাপানে তিনভাগ-ওয়ালা যে খাড়া পর্দার প্রচলন আছে, সেই রেশমের পর্দার উপর আঁকা। মস্ত পর্দা এবং প্রকাণ্ড ছবি। প্রত্যেক রেখা প্রাণে ভরা। এর মধ্যে ছোটোখাটো কিম্বা জবড়জং কিছুই নেই— যেমন উদার, তেমনি গভীর, তেমনি আয়াসহীন। নৈপুণ্যের কথা একেবারে মনেই হয় না— নানা রঙ, নানা রেখার সমাবেশ নেই— দেখবামাত্র মনে হয়, খুব বড়ো এবং খুব সত্য। তার পরে তাঁর ভূদৃশ্য-চিত্র দেখলুম। একটি ছবি— পটের উচ্চপ্রান্তে একখানি পূর্ণচাঁদ, মাঝখানে একটি নৌকা, নিচের প্রান্তে দুটো দেওদার গাছের ডাল দেখা যাচ্ছে— আর কিছু না— জলের কোনো রেখা পর্যন্ত নেই। জ্যোৎন্নার আলোয়