পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
সোনার তরী

সেজন পাগল, পরান বিকল—
ভবকূল হতে ছিঁড়িয়া শিকল
কেমনে এসেছে ছাড়িয়া সকল,
ঠেকেছে চরণে তব।
তোমার অমল কমলগন্ধ
হৃদয়ে ঢালিছে মহা-আনন্দ—
অপূর্ব গীত, অলোক ছন্দ
শুনিছে নিত্য নব।
বাজুক সে বীণা, মজুক ধরণী;
বারেকের তরে ভুলাও জননী,
কে বড়ো কে ছোটো, কে দীন কে ধনী,
কেবা আগে কেবা পিছে—
কার জয় হল কার পরাজয়,
কাহার বৃদ্ধি কার হল ক্ষয়,
কেবা ভালো আর কেবা ভালো নয়,
কে উপরে কেবা নীচে।
গাঁথা হয়ে যাক এক গীতরবে
ছোটো জগতের ছোটোবড়ো সবে,
সুখে প’ড়ে রবে পদপল্লবে
যেন মালা একখানি।
তুমি মানসের মাঝখানে আসি
দাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি,
কুন্দবরন-সুন্দর-হাসি
বীণা হাতে বীণাপাণি।
ভাসিয়া চলিবে রবি শশী তারা
সারি সারি যত মানবের ধারা
অনাদিকালের পান্থ যাহারা
তব সংগীতস্রোতে।