পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২২
ক্ষণিকা

রাশি রাশি তুলি শৈবালদল
ভরিয়া লয়েছে লোল অঞ্চল,
বাদলরাগিণী সজলনয়নে গাহিছে পরানহরণী।
বিকচকেতকী তটভূমি-’পরে বেঁধেছে তরুণ তরণী।

হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে, হৃদয়
নাচে রে।
ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে,
কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে,
তীর ছাপি নদী কলকল্লোলে এল পল্লীর কাছে রে।
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে, হৃদয়
নাচে রে।

শিলাইদহ
২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৭


অকালে

ভাঙা হাটে কে ছুটেছিস পসরা লয়ে—
সন্ধ্যা হল, ওই-যে বেলা গেল রে বয়ে।
যে যার বোঝা মাথার ’পরে ফিরে এল আপন ঘরে,
একাদশীর খণ্ড শশী উঠল পল্লীশিরে।
পারের গ্রামে যারা থাকে উচ্চকণ্ঠে নৌকা ডাকে,
হাহা করে প্রতিধ্বনি নদীর তীরে তীরে।
কিসের আশে ঊর্ধ্বশ্বাসে এমন সময়ে
ভাঙা হাটে তুই ছুটেছিস পসরা লয়ে?

সুপ্তি দিল বনের শিরে হস্ত বুলায়ে,
কা কা ধ্বনি থেমে গেল কাকের কুলায়ে।
বেড়ার ধারে পুকুরপাড়ে ঝিল্লি ডাকে ঝোপে ঝাড়ে—
বাতাস ধীরে পড়ে এল, স্তব্ধ বাঁশের শাখা।