পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬০
পলাতকা

একশো টাকার আছে একটা নোট,
সেটা আবার ভাঙানো নেই।’
বিনু বললে, ‘এই
ইস্টিশনেই ভাঙিয়ে নিলেই হবে।’
‘আচ্ছা, দেব তবে’
এই ব’লে সেই মেয়েটাকে আড়ালেতে নিয়ে গেলেম ডেকে—
আচ্ছা ক’রেই দিলেম তারে হেঁকে,
‘কেমন তোমার নোকরি থাকে দেখব আমি!
প্যাসেঞ্জারকে ঠকিয়ে বেড়াও! ঘোচাব নষ্টামি!’
কেঁদে যখন পড়ল পায়ে ধরে
দু টাকা তার হাতে দিয়ে দিলেম বিদায় করে।

জীবন-দেউল আঁধার করে নিবল হঠাৎ আলো
ফিরে এলেম দু মাস যেই ফুরালো।
বিলাসপুরে এবার যখন এলেম নামি,
একলা আমি।
শেষ নিমেষে নিয়ে আমার পায়ের ধূলি
বিনু আমায় বলেছিল, ‘এ জীবনের যা-কিছু আর ভুলি
শেষ দুটি মাস অনন্তকাল মাথায় রবে মম
বৈকুণ্ঠেতে নারায়ণীর সিঁথের ’পরে নিত্যসিঁদুর-সম।
এই দুটি মাস সুধায় দিলে ভরে,
বিদায় নিলেম সেই কথাটি স্মরণ করে।’

ওগো অন্তর্যামী,
বিনুরে আজ জানাতে চাই আমি,
সেই দু মাসের অর্ঘ্যে আমার বিষম বাকি—
পঁচিশ টাকার ফাঁকি।