বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2) Vyr সবুজ পত্ৰ আষাঢ়, ১৩২৩ ভিতর যেটি হোক একটি আসন গ্ৰহণ করবার জন্য আমাকে অবিশ্রাম কসরৎ করতে হচ্ছিল। কুচিমোড়া না ভেঙ্গে বীরাসন ত্যাগ করে।’ পদ্মাসন গ্ৰহণ করবার জো ছিল না, অথচ আমাকে বাধ্য হয়ে মিনিটে মিনিটে আসন পরিবর্তন করতে হচ্ছিল। আমার বিশ্বাস এ অবস্থায় হঠযোগীরাও একাসনে বহুক্ষণ স্থায়ী হতে পারতেন না, কেননা পৃষ্ঠদণ্ড ঋজু করুবমাত্র, পাল্কির ছাদ সজোরে মস্তকে চপেটাঘাত করছিল। ফলে, গুরুজনের সুমুখে কুলবধুর মত, আমাকে কুজপুষ্ঠে নতশিরে অবস্থিতি করতে হয়েছিল। নাভিপদ্মে মনঃসংযোগ করবার এমন সুযোগ আমি পূর্বে কখনও পাই নি ; কিন্তু অভ্যাস-দোষে আমার বিক্ষিপ্ত চিত্তবৃত্তিকে সংক্ষিপ্ত করে” নাভি-বিবরে সুনিবিষ্ট করতে পারলুম না । শরীরের এই বিপৰ্য্যস্ত অবস্থাতে আমি অবশ্য কাতর হয়ে পড়ি নি। তুখন আমার নবযৌবন। দেহ তার স্থিতিস্থাপকত-ধৰ্ম্ম তখনও হারিয়ে বসে নি। বরং সত্য কথা বলতে গেলে, নিজদেহের এই সব অনিচ্ছাকৃত অঙ্গভঙ্গী দেখে আমার শুধু হাসি পাচ্ছিল। এই যাত্রার মুখে, পূর্বদিক থেকে যে আলো ও বাতাস ধীরে ধীরে বয়ে আসছিল, তার দর্শনে ও স্পর্শনে আমার মন উৎফুল্প, উল্লসিত হয়ে উঠেছিল ; সে বাতাস যেমন সুখস্পর্শ, সে আলো তেমনি প্রিয়দর্শন। দিনের এই নব-জাগরণের সঙ্গে সঙ্গে আমার নয়ন মন সব জেগে উঠেছিল। আমি একদৃষ্টি বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলুম। চারিদিকে শুধু মাঠ ধুধু করছে, ঘর নেই দ্বোর নেই, গাছ নেই পালা নেই, শুধু মাঠঅফুরন্ত মাঠ-আগাগোড়া সমতল ও সমরূপ, আকাশের মত বাধাহীন এবং ফাঁকা'। কলিকাতার ইটকাঠের পায়রার খোপের ভিতর থেকে