পাতা:সাহিত্য-রত্নাবলী - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিতবয়ঃক্টশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগয় R যেমন জলের মত দেখায়, অথচ জল নয়, এই ছবিও সেইরূপ সত্যের মত দেখাইলও সত্য নহে। ইহার জন্য সেরূপ ব্যক্তি এক পয়সাও স্বয় করিতে প্ৰস্তুত নহেন। কিন্তু জগতের এক শ্রেণীর লোকের নিকট ইহা অপেক্ষা অধিক সত্য আর কিছুই নাই । চক্ষু যেমন আকাশে বিস্তৃত পদার্থকে দর্শন করে, তাহারাও ইহাকে সেইরূপ উজ্জ্বল ভাবে দৰ্শন করিয়া থাকেন । ইহা তাহদের ধ্যান জ্ঞানে প্ৰবেশ করে ; তঁহাদের চিত্তকে সিক্ত ও আপ্নত করে ; আঁহাদের কল্পনাকে উত্তেজিত করে ও হৃদয়কে জাগ্ৰত করে । তৎপরে জগতের ধৰ্ম্ম ও সমাজ-সংস্কারকদিগের আর একটি লক্ষণ আছে, তাহাও মানব প্ৰকৃতির স্বধৰ্ম্ম বলিলে হয় । সেটি নিজ মনন-গঠিত আদর্শে অনুরাগ। অনুরাগের এই প্ৰকৃতি পৰ্য্যালোচনা করিলে বিস্ময়-সাগরে নিমগ্ন হইতে হয়। আজি যদি সকলে শুনেন, একজন চিত্রকর নিজে এক নারীমূৰ্ত্তি চিত্ৰিত করিয়া তাহার সহিত এমনি প্রেমে পড়িয়াছে যে, তজ্জন্য সে আহার-নিদ্ৰা-বিবর্জিত হইয়াছে, তাহা হইলে সকলে তাহাকে বাতুল মনে করেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমি দেখি, মানব-প্রকৃতিতে এই বাতুলতা বিদ্যমান রহি, য়াছে। মানুষ আপনার মনন-শক্তির দ্বারা যে ছবি বা যে আদর্শ সমুৎপন্ন করে, তাহাতে এমনি আসক্ত হয় যে, জীবনকে জীবন জ্ঞান করে না । ইহা প্ৰতিদিন প্ৰত্যেকে দেখিতেছেন, লক্ষ লক্ষ লোক স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য বা গৌরবের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতেছে ; কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, স্বাধীনতা বা জাতীয় গৌরব কি বস্তু ? ইহার আকৃতি, প্রকৃতি কি প্রকার ? ইহা কোন স্থানে বাস করে ? ইহার অপেক্ষা সূক্ষ্ম, অতীন্দ্ৰিয় ও অ্যাধ্যাত্মিক পদাৰ্থ আর কি হইতে পারে? ইহা মানবের মনন রচিত, কল্পনা-সমূদ্ভুত আদর্শ মাত্র। প্রকজন ইংরাজ যে জাতীয় গৌরবের জন্য প্ৰাণ দেয়, একজান্স কাফী সে জাতীয় গৌরৰ দেখিতে পায় না। কেন ?