বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছে? কবরেজমশাইকে ডাকতে হবে?” কেদারবাবু রেগে আগুন হয়ে বললেন, “উনষাট, ষাট, একষট্টি, বাষট্টি, তেষট্টি—”

 দেখতে দেখতে লোকের ভিড় জমে গেল—চারদিকে গোলমাল, হৈ চৈ। তাই শুনে মাস্টারবাবু দেখতে এলেন, ব্যাপারখানা কি! ততক্ষণে কেদারবাবুর গোনা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি দুই চোখ লাল করে লাঠি ঘোরাচ্ছেন আর বলছেন, “ছিয়ানব্বুই, সাতানব্বুই, আটানব্বুই, নিরেনব্বুই, একশো—কোন্ হতভাগা, লক্ষ্মীছাড়া, মিথ্যেবাদী বলেছিল একশো গুনলে রাগ থামে?” বলেই ডাইনে-বাঁয়ে দুমদাম লাঠির ঘা।

 লোকজন সব ছুটে পালালো। আর মাস্টারমশাই এক দৌড়ে সেই যে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন, আর সারাদিন বেরোলেন না।

সন্দেশ—১৩২২


ডাকাত নাকি

 হারুবাবু সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরছেন। স্টেশন থেকে বাড়ি প্রায় আধ মাইল দূর, বেলাও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। হারুবাবু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলেছেন। তাঁর এক হাতে ব্যাগ, আরেক হাতে ছাতা।

 চলতে চলতে হঠাৎ তাঁর মনে হল কে যেন তাঁর পেছন পেছন আসছে। তিনি আড়চোখে তাকিয়ে দেখেন, সত্যি সত্যি কে যেন ঠিক তাঁরই মতন হনহনিয়ে তাঁর পেছন পেছন আসছে। হারুবাবুর মনে কেমন ভয় হল—চোরডাকাত নয়তো! ওরে বাবা! সামনের ঐ মাঠটা পার হবার সময়ে একলা পেয়ে হঠাৎ যদি ঘাড়ের ওপর দুচার ঘা লাঠি কষিয়ে দেয় তা হলেই তো গেছি! হারুবাবুর রোগা রোগা পা দুটো কাঁপতে কাঁপতে ছুটতে লাগলো। কিন্তু লোকটাও যে সঙ্গে সঙ্গে ছোটে!

 তখন হারুবাবু ভাবলেন, সোজা মাঠের ওপর দিয়ে গিয়ে কাজ নেই। বড় রাস্তা দিয়ে বদ্যিপাড়া ঘুরেই যাওয়া যাক, নাহয় একটু হাঁটাই হল। তিনি ফস্ করে ডানদিকের একটা গলির ভেতর ঢাকেই বক্সিদের বেড়া টপকে এক দৌড়ে বড় রাস্তায় গিয়ে পড়লেন। ওমা! সেই লোকটাও কি দুষ্টু, সেও দেখাদেখি ঠিক তেমনি করে বেপথ দিয়ে বড় রাস্তায় এসে হাজির!

 হারুবাবু ছাতাটাকে বেশ শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন—ভাবলেন যা থাকে কপালে, কাছে আসলেই দু-চার ঘা কষিয়ে দেব। হারুবাবুর মনে পড়লো, ছেলেবেলায় তিনি জিমনাস্টিক করতেন—দু-তিনবার তিনি হাতের ‘মাসল’ ফুলিয়ে দেখলেন, এখনো শক্ত হয় কি না।

 আর একটু সামনেই কালীবাড়ি। হারুবাবু তার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ রাস্তা ছেড়ে ঝোপ-জঙ্গল ভেঙে প্রাণপণে ছুটতে লাগলেন। পেছনে পায়ের শব্দ

২০০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী