বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবতার সাজা

 থর্‌ নরওয়ে দেশের যুদ্ধ-দেবতা।

 যুদ্ধের দেবতা কিনা, তাই তাঁর গায়ে অসাধারণ জোর। তাঁর অস্ত্র একটা প্রকাণ্ড হাতুড়ি। সেই সর্বনেশে হাতুড়ির এক ঘা খেলে পাহাড় পর্যন্ত গুঁড়ো হ’য়ে যায়, কাজেই সে হাতুড়ির সামনে আর কেউ এগোতে সাহস পায় না। তার উপর থরের একটা কোমরবন্ধ ছিল, সেটাকে কোমরে বেঁধে নিলে তাঁর গায়ের জোর দ্বিগুণ বেড়ে যেত।

 থরের মনে ভারি অহঙ্কার, তাঁর সমান বীর আর তাঁর সমান পালোয়ান পৃথিবীতে বা স্বর্গে আর কেউ নেই।

 একদিন থর্‌ দেখলেন, একটা পাহাড়ের পাশে একটা প্রকাণ্ড দৈত্য ঘুমিয়ে আছে আর সে এমন নাক ডাকাচ্ছে যে গাছপালা পর্যন্ত ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপছে। থর্‌ বললেন, “এই বেয়াদব, নাক ডাকাচ্ছিস্‌ যে?” বলেই হাতুড়ি দিয়ে ধাঁই ধাঁই ক’রে, তার মাথায় তিন ঘা লাগিয়ে দিলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য, ওই হাতুড়ির অমন ঘা খেয়েও দৈত্যের কিছুই হল না, সে খালি একটু মাথা চুলকিয়ে বলল, “পাখিতে কি ফেলল?”

 থর্‌ আশ্চর্য হয়ে বললেন, “তুমি তো খুব বাহাদুর হে, আমার এ হাতুড়ির ঘা সহ্য করতে পারে, এমন লোক যে কেউ আছে, তা আমি জানতাম না।”

 দৈত্য বলল, “তা জান্‌বেন কোত্থেকে, আমাদের দেশে তো যান নি কখন। সেখানে আমার চেয়েও বড়, আমার চেয়েও ষণ্ডা ঢের ঢের দৈত্য আছে।” থর্‌ বললেন, “বটে? তবে তো আমার একবার সেখানে যেতে হচ্ছে।”

 দৈত্য তাঁকে দৈত্যপুরীর পথ দেখিয়ে দিল আর বলল, “দেখবেন, সেখানে গিয়ে বেশি বড়াই-টড়াই করবেন না কারণ আপনি যত বড়ই দেবতা হন না কেন, সে দেশে বাহাদুরি করতে গেলে শেষে লজ্জা পেতে হবে।”

 দৈত্যপুরীর চারদিকে প্রকাণ্ড বরফের দেয়াল—সে এত বড় যে তার নীচে দাঁড়ালে চুড়ো দেখা যায় না। সেই দেয়ালের এক জায়গায় বড় বড় গরাদ দেওয়া আকাশের মত উঁচু ফটক।

 থর্‌ দেখলেন সে ফটক খোলা তাঁর সাধ্য নয়, তাই তিনি দুটো গরাদের ফাঁকের মধ্যে দিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। দেয়াল-ঘেরা দৈত্যপুরীর রাজসভায় বসে বসে পাহাড়ের মত বড় বড় দৈত্যরা সব গল্প করছে; তাদের মধ্যে সব চেয়ে বড় যে, সেই হচ্ছে দৈত্যের রাজা।

 দৈত্যরা থর্‌কে দেখেও যেন দেখে নি এমনিভাবে গল্প করতে লাগল। খানিক পরে দৈত্যরাজ থরের দিকে তাকিয়ে, বড় বড় চোখ করে, যেন কতই আশ্চর্য হয়ে বললেন, “কে ও? আরে, থর্‌ নাকি? আপনিই কি সেই দেবতা, যার গায়ে ভয়ানক জোর। তা হবেও-বা, শুধু শরীর বড় হ’লেই তো আর গায়ে জোর হয় না? আচ্ছা, আপনার সম্বন্ধে যে-সকল ভয়ানক গল্প শুনি সে-সব কি সত্যি?”

 থর্‌ বললেন, “সত্যি কিনা, এখনি বুঝবে। ওরে কে আছিস, আমায় একটু জল দে তো, এক চুমুকে কতখানি খাওয়া যায় তোদের একবার দেখিয়ে দি।”

দেশ-বিদেশের গল্প
৮৩