পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ : ৮৭ সরলা এক মহত পরে কহিলেন, "গোপাল, বাবা, বালিশ ক'টা উপরে রাখ দেখি, আমি এক বার বসি ।" গোপাল আস্তে আস্তে বিছানায় বালিশগুলি উপয"পরি রাখিল । সরলা বিছানায় বাহর ভর দিয়া উঠিয়া বালিশ ঠেস দিয়া বসিলেন । এই পরিশ্রমে চারি পাঁচ বার ঘন ঘন নিশ্বাস বহিল । শ্রান্তি দরে হইলে সরলা কহিলেন, “বাবা গোপাল, একবার এসে আমার কোলে বসো দেখি । এখনও শক্তি আছে-এক বার কোলে ক’রে নি, আর দিন-কতক পরে তাও পারবো না ।” গোপাল সরলার দিক হইতে মুখ ফিরাইয়া অন্য দিকে চাহিয়া চপ করিয়া রহিল । গোপালের কথা কহিবার জো নাই । তাহার চক্ষ দিয়া ঝর ঝর করিয়া অশ্রপাত হইতেছে । সরলা বঝিতে পারিয়া গোপালের হাত ধরিয়া টানিয়া আপনার বাম দিকে বসাইলেন । গোপাল সরলার বক্ষোপরি শির স্থাপন করিয়া নীরবে রোদন করিতে লাগিল। : সরল হস্ত দ্বারা গোপালের মুখ ফিরাইয়া অঞ্চল দ্বারা চক্ষ মছাইয়া দিয়া, হাসিয়া কহিলেন, “ভয় কি গোপাল, আমি কি তোমাকে ফেলে কোনখানে যেতে পারি ? আমি শীঘ্রই ভাল হবে ।" গোপাল পর্বাপেক্ষা গরতের বেগে অশ্রপাত করতে লাগল । সরলা দুই হাত দিয়া গোপালের মস্তক ধারণ করিয়া সনেহে বারবার শিরশচন্বন করিলেন । একটু পরে শ্যামা আসিল । বহ কাল পরে সরলার মুখে হাসি দেখিয়া শ্যামার আর আনন্দের সীমা রহিল না । শ্যামা বিছানার কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, "খড়ী-মা, আজ একটা ভাল আছ না ? রোজ যদি এমন ক’রে একট একটু গোপালকে কোলে নেও, আর গোপালের সঙ্গে কথা কও, তা হ’লে পনের দিনের মধ্যেই আবার তুমি যেমন মানুষ, তেমনি হ’তে পারো ।” সরলা কহিলেন, “শ্যামা, আজ আমি ভাল আছি । তোমার মত মেয়ে আর গোপালের মত ছেলে কাছে থাকলে যে হতভাগিনী ভাল না থাকে, সে সবগেও ভাল থাকবে না ।" শ্যামার চক্ষে জল টল টল করিতেছে । ঈষৎ মুখ বাঁকাইয়া কহিল, “আবার শ্যামার মতন মেয়ে, শ্যামার মতন মেয়ে করতে লাগলে কেন ? শ্যামা কার কি করেছে ?” সরলা সজল নেত্ৰে হাসিয়া কহিলেন, “আমার আপনার মা যা না করেছে, শ্যামা তার বেশী করেছে । এর চাইতে পথিবীতে কি আর কার বেশী করতে পারে ?” শ্যামা সরলার কথা শেষ না হইতে হইতেই সে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া রান্নাঘরে প্রবেশ করিল। শ্যামা নিজের প্রশংসা শুনিতে পারে না। সমাজের খবরের কাগজের মত একটা ভাল কাজ করিয়া বলিয়া বেড়াইতে পারে