পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনাসক্তিই পূর্ণ আত্মত্যাগ So বালক শুককে শিক্ষার জন্ত র্তাহার নিকট পাঠানো হইল। রাজ। জানিতেন যে, ব্যাসের পুত্র তাহার নিকট তত্ত্বজ্ঞান শিক্ষা করিবার জন্ত আসিতেছেন, স্বতরাং তিনি পূর্ব হইতেই কতকগুলি ব্যবস্থা করিয়াছিলেন । যখন এই বালক গিয়া রাজপ্রাসাদের দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন, তখন প্রহরিগণ র্তাহার কোন খবরই লইল না। তাহারা কেবল র্তাহাকে বসিবার জন্য একটি আসন দিল। সেখানে তিনি তিন দিন তিন রাত্রি বসিয়া রহিলেন, কেহ তাহার সঙ্গে কথাই কহিতেছে না ; তিনি কে, কোথা হইতে আসিয়াছেন—কেহই কিছু জিজ্ঞাসা করিল না । তিনি এত বড় একজন ঋষির পুত্র, তাহার পিতা সমগ্র দেশে সন্মানিত, তিনি নিজেও একজন মাননীয় ব্যক্তি, তথাপি সামান্য প্রহরিগণও র্তাহার দিকে ভ্ৰক্ষেপ করিতেছে না। অতঃপর সহসা রাজার মন্ত্রিগণ এবং বড় বড় কর্মচারীরা আসিয়া তাহাকে অতিশয় সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা করিলেন । র্তাহার। র্তাহাকে ভিতরে এক স্বশোভিত গৃহে লইয়া গেলেন, সুগন্ধি জলে স্নান করাইলেন, খুব ভাল ভাল পোশাক পরিতে দিলেন, আট দিন ধরিয়া র্তাহাকে সর্বপ্রকার বিলাসের ভিতর রাখিয়া দিলেন । কিন্তু এই ব্যবহারের পরিবর্তনে শুকের শাস্ত গম্ভীর মুখে এতটুকু পরিবর্তন ঘটিল না। দ্বারে অপেক্ষা করিবার সময় তিনি যেরূপ ছিলেন, এই-সকল বিলাসের মধ্যেও তিনি ঠিক সেইরূপই রহিলেন। তখন র্তাহাকে রাজার নিকট লইয়া যাওয়া হইল। রাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন, নৃত্য-গীত-বাদ্য ও অন্যান্য আমোদ-প্রমোদ চলিতেছিল। রাজা তাহকে কানায়-কানায় পূর্ণ এক বাটি দুধ দিয়া বলিলেন, এই দুধের বাটিটি লইয়া সাতবার রাজসভা প্রদক্ষিণ করিয়া এস ; সাবধান, যেন এক ফোটা দুধও না পড়ে ? বালকও সেই বাটিটি লইয়া এইসব গীতবাদ্য ও স্বন্দরী রমণীগণের মধ্য দিয়া সাতবার সভা প্রদক্ষিণ করিলেন, এক স্টোটা দুধ ও পড়িল না। সেই বালকের মনের উপর এমন ক্ষমতা ছিল যে, যতক্ষণ না তিনি ইচ্ছা করিবেন, ততক্ষণ র্তাহার মন কিছু দ্বারাই আকৃষ্ট ইষ্টবে না। বালক সেই পাত্রটি রাজার নিকট লইয়া আসিলে রাজা তাহাকে বলিলেন ‘তোমার পিতা তোমাকে যাহ। শিখাইয়াছেন এবং তুমি নিজে যাহ। শিথিয়াছ, আমি তাহারই পুনরাবৃত্তি করিতে পারি, তুমি সত্য উপলব্ধি করিয়াছ ; এখন গৃহে গমন কর।’