পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ કે 8 স্বামীজর বাণী ও রচনা ভবিষ্যৎ বাঙলাদেশ এখনও পায়ের উপর দাড়ায়নি। বিশেষ দুর্দশা হয়েছে শিল্পের। সেকেলে বুড়ীরা ঘরদোর আলপনা দিত, দেয়ালে চিত্রবিচিত্র করত । বাহার ক’রে কলাপাত কাটত, খাওয়া-দাওয়া নানাপ্রকার শিল্পচাতুরীতে সাজাত, সে সব চুলোয় গেছে বা যাচ্ছে শীঘ্র শীঘ্ৰ ! নূতন অবশু শিখতে হবে, করতে হবে, কিন্তু তা বলে কি পুরানোগুলো জলে ভাসিয়ে দিয়ে নাকি ? নূতন তো শিখেছ কচুপোড়া, খালি বাক্যিচচ্চড়ি ! কাজের বিদ্যা কি শিখেছ ? এখনও দূর পাড়াগায়ে পুরানো কাঠের কাজ, ইটের কাজ দেখে এসগে। কলকেতার ছুতোর এক জোড়া দোর পর্যন্ত গড়তে পারে মা ! দোর কি আগড় বোঝবার জো নেই! কেবল ছুতোরগিরির মধ্যে আছে বিলিতী যন্ত্র কেনা !! এই অবস্থা সর্ববিষয়ে দাড়িয়েছে। নিজেদের যা ছিল, তা তো সব যাচ্ছে ; অথচ বিদেশী শেখবার মধ্যে বাক্যি-যন্ত্রণ মাত্র !! খালি পুথি প’ড়ছ আর পুথি প’ড়ছ! আমাদের বাঙালী আর বিলেতে আইরিশ, এ দুটো এক ধাতের জাত। খালি বকবিকি করছে। বক্তৃতায় এ দু-জাত বেজায় পটু ৷ কাজের—এক পয়সাও নয়, বাড়ার ভাগ দিনরাত পরস্পরে খেয়োখেয়ি ক’রে মরছে !!! পরিষ্কার সাজানো-গেজানো এ দেশের ( পাশ্চাত্যে ) এমন অভ্যাস যে, অতি গরীব পর্যন্তরও ও-বিষয়ে নজর। আর নজর কাজেই হ’তে হয়— পরিষ্কার কাপড়-চোপড় না হ’লে তাকে যে কেউ কাজ-কর্মই দেবে না । চাকর-চাকরানী, রাধুনী সব ধপধপে কাপড়–দিবারাত্র। ঘরদের ঝেড়েকুড়ে, ঘষেমেজে ফিটফাট । এদের প্রধান শায়েস্তা এই যে, যেখানে সেখানে যা তা কখনও ফেলবে না! রান্নাঘর ঝকঝকে—কুটনো-ফুটনো যা ফেলবার তা একটা পাত্রে ফেলছে, তারপর সেখান হ’তে দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলবে। উঠানেও ফেলে না । রাস্তায়ও ফেলে না । যাদের ধন আছে তাদের বাড়ীঘর তো দেখবার জিনিস -দিনরাত সব ঝকঝক তার ওপর নানাপ্রকার দেশবিদেশের শিল্পদ্রব্য সংগ্রহ করেছে ! আমাদের এখন ওদের মতো শিল্প-সংগ্রহে কাজ নেই, কিন্তু যেগুলো উৎসন্ন যাচ্ছে, সেগুলোকে একটু ধত্ব করতে হবে, না—না ? ওদের মতো চিত্র বা ভাস্কর্য-বিদ্যা হতে আমাদের এখনও ঢের দেরি! ও দুটাে কাজে আমরা চিরকালই অপটু। আমাদের ঠাকুরদেবতা সব দেখ না, জগন্নাথেই মালুম!