পাতা:হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৬).pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ৮ ]

কোন উপায় নাই। সহজ-ধর্ম্মে বাচ্য নাই, বাচক নাই এবং ইহাদের সম্বন্ধও নাই। যে যে-উপায়ে মুক্তির চেষ্টা করুক না কেন, শেষ সকলকে সহজ পথেই আসিতে হইবে। তিনি বলেন,—মানুষ আপনার স্বভাবটাই বুঝে না। ভাবও নাই, অভাবও নাই, সকলই শূন্যরূপ অর্থাৎ ভব ও নির্ব্বাণে কোনও প্রভেদ নাই। দু-ই এক, সুতরাং সহজিয়ারা অদ্বয়বাদী। মানুষের স্বভাব যদি এই হইল, তখন তাহাকে বদ্ধ করে কে? সরোরুহপাদের শেষ দুইটি দোঁহা এই;—

পর অপ্পাণ ম ভত্তি করু সঅল নিরন্তর বুদ্ধ।
এহুসো নিম্মল পরম পউ চিত্ত সহাবেঁ সুদ্ধ॥

 আপনি ও পর, এ ভ্রান্তি করিও না (দু-ই এক); সকলই নিরন্তর বুদ্ধ, এই সেই নির্ম্মল পরমপদ্মরূপ চিত্ত স্বভাবতই শুদ্ধ।

অদ্বঅচিত্ত তরুঅর ফরাউ তিহুঅণেঁ বিস্থা [র]
করুণা ফুল্লিঅ ফল ধরই ণামে পর উআর।  [পত্রাঙ্ক ১১৯]

 অদ্বয়চিত্ততরু ত্রিভুবনে বিস্তৃত হইয়া স্ফূর্ত্তি পায়, তখন করুণার ফুল ফোটে এবং ফল ধরে, সে ফলের নাম পর-উপকার।

 যতদূর সংক্ষেপে পরিলাম, সরোরুহবজ্রপাদের দোঁহা ও অদ্বয়বজ্রের টীকার মূল কথাগুলি বলিয়া দিলাম। সহজিয়া ধর্ম্মের যত বই আছে, সকলেরই মূল কথা ঐ এক, কিন্তু ইহাতে একটি মুস্কিল আছে; সেটি এই যে, সহজিয়া ধর্ম্মের সকল বইই সন্ধ্যা ভাষায় লেখা। সন্ধ্যা ভাষায় মানে আলো আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না অর্থাৎ এই সকল উঁচু অঙ্গের ধর্ম্মকথার ভিতরে একটা অন্য ভাবের কথাও আছে। সেটা খুলিয়া ব্যাখ্যা করিবার নয়। যাঁহারা সাধন-ভজন করেন, তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই। আমরা সাহিত্যের কথা কহিতে আসিয়াছি, সাহিত্যের কথাই কহিব।

 এখন এই যে ভাষা, যাহাকে আমি বাঙ্গালা বলিতেছি, ইহা বাঙ্গালা কি না? সরোরুহবজ্রের দুইটা দোঁহা দিয়াছি, একটা গান দিই। এই গানটি চর্য্যাচর্য্য-বিনিশ্চয় নামক সহজিয়া গ্রন্থে আছে। সরোরুহ শব্দ বাঙ্গালায় সরহ হয়, এই গানের ভণিতায়ও সরহ আছে—

অপণে রচি রচি ভবনির্বাণা
মিছেঁ লোঅ বন্ধাবএ অপনা॥ ধ্রু॥
অম্ভে ন জাণঁহূ অচিন্ত জোই
জাম মরণ ভব কইসণ হোই॥ ধ্রু॥
জইসো জাম মরণ বি তইসো।
জীবন্তে মঅলেঁ ণাহি বিশেসো॥ ধ্রু॥