পাতা:হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৬).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২৩ ]

৪। ভুসুকু

 বোধিচর্য্যাবতার প্রভৃতি মহাযানগ্রন্থের কর্ত্তা শান্তিদেবকে তাঁহার জীবনচরিতকার রাউতু ও ভুসুকু বলিয়া গিয়াছেন। তিনি ৬৪৮ হইতে ৮১৬ খ্রীঃ অব্দের মধ্যে তাঁহার বইগুলি লিখেন। তাঁহার বাড়ী কোথায় ছিল জানা যায় না। তারানাথ বলিয়াছেন, তাঁহার বাড়ী সৌরাষ্ট্রে ছিল। জীবনচরিতকার তাঁহার দেশের যে নামটি দিয়াছেন, তাহা পড়া যায় না, কিন্তু অনেক দিন মগধ ও নালন্দায় ছিলেন ও তিনি মঞ্জুবজ্রের নিকট উপদেশ পাইয়াছিলেন। ইহাতে বোধ হয়, ইনি ভারতের পূর্ব্বাঞ্চলের লোক হইবারই অধিক সম্ভাবনা।

 আর একজন শান্তিদেব, উপাধি যোগীশ্বর, দুইখানি তন্ত্রের পুথি লিখিয়াছেন। একখানির নাম ‘শ্রীগুহ্যসমাজমহাযোগতন্ত্রবালবিধি’, আর একখানির নাম ‘সহজগীতি’। ইঁহারই বংশধর মেকলের মত অনুসারে আর একখানি তন্ত্রের পুস্তক লেখা হয়। উহার নাম ‘চিত্তচৈতন্যশমনোপায়’। তেঙ্গুরে বলে, ইঁহার বাড়ী ‘জাহোর’। একজন ভুসুকু সোসাইটির ৪৮০১ নম্বরের পুথিখানি লিখিয়াছেন। ঐ পুস্তকে তান্ত্রিক বৌদ্ধদিগের কুটিনির্ম্মাণ, শয়ন-ভোজন-পান ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। ঐ গ্রন্থেও আবার কয়েকটি বাঙ্গালা দোঁহা আছে।

 আমাদের সিদ্ধাচার্য্য রাউতু ভুসুকু চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়ের ৮টি পদ লিখিয়া গিয়াছেন। প্রথম ভুসুকু শান্তিদেবে সহিত তাঁহার যে কোন সম্পর্ক আছে, এমন বোধ হয় না; কারণ, শান্তিদেব অনেক পূর্ব্বের লোক। আমাদের ভুসুকু লুই সিদ্ধাচার্য্যের পরের লোক। কারণ, লুই আদিসিদ্ধাচার্য্য ও তাঁহার সময় ৯৫০ হইতে ১০৫০এর মধ্যে। আমাদের ভুসুকু যখন একজন সিদ্ধাচার্য্য মাত্র, তখন তিনি যে লুইএর পরবর্ত্তী, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।

 তবে কি তিনি তান্ত্রিক শান্তিদেবের সহিত এক? এ কথা বলিবার একমাত্র কারণ দেখিতে পাই যে, শান্তিদেব ‘সহজগীতিকা’ নামে পুস্তক লিখিয়াছেন, আর ভুসুকুও সহজিয়া মতের গান লিখিয়াছেন।

 যে ভুসুকু সোসাইটি ৪৮০১ নম্বরের পুথিখানি লিখিয়াছেন, তিনি ও আমাদের সিদ্ধাচার্য্য ভুসুকু কি এক? এক হইতেও পারে; কারণ, দুজনেই বাঙ্গালা লিখিয়াছেন। কিন্তু আরও অধিক খবর না পাইলে ইঁহারা এক কি না বলা যায় না। আমাদের ভুসুকু যে বাঙ্গালী ছিলেন, তাহা তাঁহার গানেই প্রকাশ। তিনি বলিয়াছেন—

আজি ভুসু বঙ্গালী ভইলী।
ণিঅ ঘরিণী চণ্ডালী লেলী॥

 তাঁহার আটটি গানে তাঁহার নাম ভুসুকু বাদে ৩২৩টি কথা আছে। ইহার মধ্যে ৩৭টি সংস্কৃত, ৬৮টি বিকৃত সংস্কৃত, ১৮৬টি পুরাণ বাঙ্গালা ও ৩২টি চলিত বাঙ্গালা।

 সাঁইত্রিশটি সংস্কৃত শব্দের মধ্যে ‘সমরস’, ‘সহজানন্দ’ ও ‘বিরমানন্দ’ বৌদ্ধধর্ম্মের শব্দ, বাকীগুলি ঠিক এই ভাবে আজিও চলিতেছে। কেবল ‘উহ’ চলে না, কিন্তু ‘উহ্য’ চলে; ‘খ’ চলে