পাতা:হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৬).pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ৫ ]

অদ্বয়বজ্র। আরও একখানি পুস্তক পাইলাম, তাহার নামও দোঁহাকোষ, গ্রন্থকারের নাম কৃষ্ণাচার্য্য, উহারও একটি সংস্কৃত টীকা আছে।

 বেণ্ডল যে সুভাষিত-সংগ্রহ ছাপাইয়াছেন, তিনি তাহার পরিশিষ্টে এই নূতন ভাষার আটাশটি দোঁহা টীকাটিপ্পনী সমেত দিয়াছেন। তিনি বলেন, ঐ ভাষা একটি প্রাচীন অপভ্রংশ ভাষা, তাহার একটি দোঁহা এখানে দিতেছি।

গুরু উবএসো অমিঅরসু হবহিং ন পিঅউ জেহি।
বহুসল্মমরুত্থলিহিঁ তিসিএ মরিথউ তেহি। [পত্রাঙ্ক ১০২]

 বেণ্ডল সাহেবের পাঠ একটু আলাদা রকমের—

গুরু উবএসহ অমিঅ রসু হবহি ণ পীউ জেহি।
জহ সত্থে(ণ) মরুত্থলিহিং তিসিঅ মরিউ তেহি।

 প্রফেসর বেণ্ডল তাঁহার প্রথম পরিশিষ্টে একবার বলিয়াছেন, ঐগুলি অপভ্রংশ ভাষা, আর এক বার বলিয়াছেন, বৌদ্ধ প্রাকৃত ভাষা এবং চতুর্থ পরিশিষ্টে শুদ্ধ প্রাকৃত শব্দে উহাদের উল্লেখ করিয়াছেন। সুতরাং এ ভাষাটি যে কি, তিনি স্থির করিয়া উঠিতে পারেন নাই। বাস্তবিক প্রাকৃত অপভ্রংশ পালি প্রভৃতি শব্দের কোন নির্দ্দিষ্ট অর্থ নাই। সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন হইলেই তাহাকে প্রাকৃত বলে। অশোকের শিলালিপিও প্রাকৃত, পালিও প্রাকৃত, জৈনপ্রাকৃতও প্রাকৃত, নাটকের প্রাকৃতও প্রাকৃত, বাঙ্গালাও প্রাকৃত, মারাঠীও প্রাকৃত। প্রাকৃত ব্যাকরণে যে ভাষা কুলায় না, তাহাকে অপভ্রংশ বলে। দণ্ডী কাব্যাদর্শে বলিয়াছেন,—ভাষা চার রকম;—সংস্কৃত, প্রাকৃত, অপভ্রংশ ও মিশ্র। দণ্ডী কোন্‌ কালের লোক, তাহা জানি না, তবে তিনি যে খ্রীঃ ৬ শতকের পূর্ব্বে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। তিনি মহারাষ্ট্র ভাষাকে ভাল প্রাকৃত বলিয়াছেন এবং সেই ভাষায় লিখিত ‘সেতুবন্ধ কাব্যে’র উল্লেখ করিয়াছেন। ভরত-নাট্যশাস্ত্রে ভাষার আর এক রকম ভাগ আছে। উহাতে বলে,—সংস্কৃত ছাড়া দুইটা ভাষা আছে, ভাষা আর বিভাষা। তিনি মহারাষ্ট্র ভাষার নাম করেন না, দাক্ষিণাত্য, অবন্তী, মাগধী, অর্দ্ধমাগধী প্রভৃতিকে ভাষা বলেন, আর আভীরী, সৌবীরী প্রভৃতিকে বিভাষা বলেন। তিনি প্রাকৃত একটা ভাষা বলেন না, উহাকে পাঠ বলেন। সংস্কৃত পাঠ ও প্রাকৃত পাঠ। সুতরাং যখন নাট্যশাস্ত্র লেখা হয়, অর্থাৎ খ্রীঃ পূঃ ২য় শতাব্দীতে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা প্রচলিত ছিল, ভাষা অর্থাৎ সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন ভাষা, যেগুলি সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন নয়, সেগুলি বিভাষা। তিনি বলিয়াছেল,—বিভাষাও নাটকে চলিতে পারে, কিন্তু অন্ধ্র, বাহ্লীক প্রভৃতি ভাষা একেবারে চলিবে না। ভরত-নাট্যশাস্ত্রে ও দণ্ডীর কাব্যাদর্শে ভয়ানক মতভেদ দেখা যায়। বররুচি ‘প্রাকৃত-প্রকাশে’ মহারাষ্ট্রী, সৌরসেনী, মাগধী ও পৈশাচী, চারিটি ভাষা প্রাকৃত বলিয়াছেন, তাহার মধ্যে মহারাষ্ট্রীর প্রকৃতি সংস্কৃত, সৌরসেনীর প্রকৃতি মহারাষ্ট্রী, পৈশাচীর প্রকৃতি সৌরসেনী। আরও অনেক প্রাকৃত ব্যাকরণ আছে। যিনি যখন প্রাকৃত ব্যাকরণ লিখিয়াছেন,