শিৰেৰ গল। শূণ্য-পুরাণে শিবের গান। শিবের গান–রামাই পণ্ডিত—খৃঃ ১০ম-১১শ শতাব্দী। মহাযান সম্প্রদায়ের বৌদ্ধগণ শিবপূজা করিতেন। এই শিবের স্থান বুদ্ধ অপেক্ষা নিয়ে। শূন্ত-পুরাণে দেখা যায় শিব বুদ্ধ বা ধর্ম্মকে পূজা করার জন্ত উপকরণ সংগ্রহ করিতেছেন। বৌদ্ধযুগের শিব কৃষকদিগের দেবতা। পরবর্তী হিন্দুধর্ম্মের নেতৃগণ শিবের যে প্রশান্ত রজত-গিরিনিভ মূর্ত্তি ও সমাধির অবস্থা কল্পনা করিয়াছেন বৌদ্ধযুগের শিবে তাহার কিছুই নাই। তিনি কৃষি-কার্য্য করেন এবং গৃহে শিবানীর সঙ্গে নিম্ন শ্রেণীর লোকের দ্যায় কলহ করেন। এই কৃষক-শিবের গান বঙ্গদেশে এরূপ প্রচলিত হইয়াছিল যে, পরবর্তী হিন্দু কবিগণও শিবচরিত্রের এই ভাগ একবারে বর্জন করিতে পারেন পাই। রামেশ্বর, ভারতচন্দ্র প্রভৃতি কবিগণ শিবের যে কৃষি-কার্য্য ও গার্হস্থ্য কলহের আভাস দিয়াছেন, তাহ পূর্ব্ববর্ত্তী যুগের গীতি অবলম্বন করিয়া। শূন্ত-পুরাণের যে শিবের গান উদ্ধৃত হইল, তাহ পাঠ করিয়া জনৈক মনস্বিনী ইংরাজ-মহিলা তাহার কবিত্বের অতি উচ্চ প্রশংসা করিয়াছিলেন। শিবের ভক্ত শিবকে উলঙ্গ দেখিয়া তাহাকে বস্ত্র বয়নের জন্ত কাপাস বুনিতে বলিতেছেন, তাহার উপবাস-শীর্ণ দেহ এবং ভিক্ষা-বৃত্তির কথা স্মরণ করিয়া ধান্ত রোপণ করিতে উপদেশ দিতেছেন, ইহা সেই ইংরাজ-মহিলার মতে ভক্তির পরাকাষ্ঠা। সাধারণ ভক্ত উপাস্ত দেবতার নিকট স্বীয় অভাবঅভিযোগের কথাই জানাইয়া থাকেন। কিন্তু এখানে উপাসক নিজকে সম্পূর্ণরূপে ভুলিয়া স্বীয় উপাস্ত দেবতার দুঃখে বিগলিত হইতেছেন, এরূপ নিজের সুখ-দুঃখ-বিস্তৃতি এবং দেবতার প্রতি তন্ময়-ভাব ভক্তির ও কবিত্বের শ্রেষ্ঠতম উপাদান। যতদূর ধর্ম্মর ওঁঙ্কার যান। গারস্থের মহাপাপ দূরত পলান। (১) সাম যজু ঋক্ অথর্ব্ব বেদ। ওঁকার লইয়া ধর্ম্মর পঞ্চম বেদ। শুন শুন পণ্ডিত আগমর ভেদ॥ (১) যতদূর পর্য্যন্ত ধর্ম্মঠাকুরের শুকার শব্দ ধ্বনিত হয়, ততদূর হইতে গৃহস্থের যত পাপ দূরে সরিয়া যায়।