১৯০৫ সালে বাংলা/চিত্তরঞ্জন গুহ ঠাকুরতা

উইকিসংকলন থেকে

শ্রীমান্ চিত্তরঞ্জন গুহ ঠাকুরতা।

 এই বীরবালক সুপ্রসিদ্ধ বক্তা শ্রীযুক্ত মনোরঞ্জন গুহ ঠাকুরতার অন্যতম পুত্ত্র। ইহার অঙ্গে এণ্টিসার্কুলার সোসাইটির নাম অঙ্কিত ছিল বলিয়া কাপুরুষ পুলিশের লোকেরা ইহাকে আক্রমণ করে। এদিক হইতে লগুড়ের আঘাতে উহাকে ওদিকে ফেলিয়া দেয়। বালক “বন্দেমাতরম্” বলিতে বলিতে ওদিকে গিয়া পড়ে, আবার ওদিক হইতে লাঠির ঘায় বালককে এদিকে ফেলিয়া দিলে বালক বন্দেমাতরম্ বলিতে বলিতে এদিকে আসিয়া পড়ে। কঠোর আঘাতে একবারও বালক “বন্দেমাতরম্” বলিতে বিরত হয় নাই। শেষে পাষণ্ডেরা যখন তাহাকে পুষ্করিণীতে ফেলিয়া দিল ও লগুড়াঘাত করিতে লাগিল তখনও শ্রীমান্ চিত্তরঞ্জন “বন্দেমাতরম্” ধ্বনি পরিত্যাগ করে নাই। এই ভাবে তাহার প্রাণ-বিয়োগের সম্ভাবনা দেখিয়া একজন হিন্দুস্থানী পুলিশ কর্ম্মচারী তাহাকে পুষ্করিণীর পাড়ে তুলিয়া দেয়। বালকের তখন মাথা ঘুরিতেছিল, তীরে আসিয়া দারুণ যন্ত্রণায় তাহার সংজ্ঞা বিলুপ্ত হইলে, সে বিশ্রামলাভ করিল। তাহার পিতা আসিয়া যখন পুত্ত্রকে দেখিলেন, তখন বালক বলিল


“বাবা শেষ পর্য্যন্ত আমি “বন্দেমাতরম্” বলিয়াছি। আর এক ঘা লাঠী খাইলে আমার মৃত্যু হইত।” পিতা মনোরঞ্জন বাবু প্রত্যুত্তরে বলিলেন, “বাবা দেশের জন্য তুমি যদি মরিতে, তাহা হইলে আমি কিছুমাত্র দুঃখিত হইতাম না।” ঐ দিবস বালকের জ্বর হয়; এখন আমরা আহ্লাদের সহিত পাঠকবর্গকে জানাইতেছি, তিনি ভাল আছেন।

বাবু কৃষ্ণকুমার মিত্র।

 ইনি যে প্রকার স্বদেশানুরাগ ও সৎসাহস প্রকাশ করিয়া বালকদিগকে কাপুরুষদিগের আক্রমণ রক্ষা করিবার জন্য অগ্রগামী হইয়াছিলেন, তাহা পূর্ব্বেই বর্ণিত হইয়াছে। কৃষ্ণকুমার বাবু রিক্ত হস্তে ৪ জন কনেষ্টেবলের গলদেশ ধৃত করিয়া তাহাদিগকে কয়েক হাত তফাতে নিক্ষেপ করেন তাহাতে কয়েকটি ছাত্রের নির্য্যাতন রহিত হয়।

বাবু ভূপেন্দ্রনাথ বসু

 ছাত্রদিগকে রক্ষা করিবার জন্য নির্ভীক চিত্তে সশস্ত্র পুলিশ কনষ্টেবলের হস্ত ধারণ করিয়া বলিলেন “মারো মৎ”। একজন মুসলমান প্রহরী তাঁহাকে বলিল, “তোমকোবি মারেগা” ভূপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “মারো”। তাঁহাকে কিন্তু কেহ মারিল না।