পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
আখ্যানমঞ্জরী।

সত্বরগমনে সেই স্থানে উপস্থিত হইল এবং দেখিল, ইঁদুর যেমন কলে পড়িয়া বিবশ হইয়া ছটফট করিতে থাকে, ঐ দুরন্ত দস্যুর অবিকল সেই অবস্থা ঘটিয়াছে।

 হাঁচেন্‌কে উপস্থিত দেখিয়া, দস্যু নিতান্ত কাতরবাক্যে এই প্রার্থনা করিতে লাগিল, তুমি যন্ত্রের গতি স্থগিত করিয়া, আমায় প্রাণদান কর, আমি জন্মের মত তোমার ক্রীতদাস হইয়া থাকিব। হাঁচেন তাহার প্রার্থনায় কর্ণপাত করিল না, দাঁড়াইয়া হাস্যমুখে কৌতুক দেখিতে লাগিল। চক্রের সঙ্গে, অবিশ্রামে ঘূর্ণিত হওয়াতে, দস্যু ক্রমে ক্রমে বিচেতন হইল, এবং যন্ত্রের নিম্নভাগে পতিত হইয়া, সেই অবস্থায় ঘুরিতে লাগিল। যত ক্ষণ পর্যন্ত তাহার চেতনা ছিল, সে একবার বিনয়, একবার লোভপ্রদর্শন, একবার বা ভয়প্রদর্শন করিয়া নিরন্তর হাঁচেনের নিকট এই প্রার্থনা করিয়াছিল, তুমি আমায় প্রাণদান কর। সে মনে করিলে, যন্ত্রের গতি স্থগিত করিয়া, অনায়াসে ঐ দস্যুকে অবতীর্ণ করিতে পারি, কিন্তু সেরূপ করা তাহার পক্ষে কোনও ক্রমে পরামর্শসিদ্ধ ছিল না, কারণ, বিপদ হইতে উত্তীর্ণ হইলেই দস্যু পুনরায় নিজমূর্ত্তি ধরিত, তাহার সন্দেহ নাই। হাঁচেন ইহাও জানিত, যন্ত্রে থাকিলে তাহার প্রাণনাশের কোনও আশঙ্কা নাই, কেবল উৎকট ভয়ে সাতিশয় অভিভূত থাকিয়া, আন্তরিক যাতনা ভোগ করিবে। এই সকল কারণে, সে তাহার অবতারণে বিরত রহিল।