পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৯৯

সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের যে রস সম্পর্ক, তাহাই বিগলিত হইয়া গীতাঞ্জলিতে আকার গ্রহণ করিয়াছে।

 এই রস সম্পর্কে বা বন্ধনে রবীন্দ্রনাথ কখনো ভক্ত, কখনো সেবক, কখনো বন্ধুসখা, কখনো পুত্র, কখনোবা প্রিয়। নানারূপে ও ভাবে রবীন্দ্রনাথের এই ‘আনন্দী’ রূপটি গীতাঞ্জলিতে মূর্ত হইয়াছে।

 একটি গানে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন, ‘মেনেছি, হার মেনেছি।’ তাঁহার অন্তর্যামীর সঙ্গে কোন্ খেলাতে তিনি এই হার স্বীকার করিয়াছেন, তাহার ইঙ্গিত এখানে পাওয়া যায়—

আমার চিত্ত গগন থেকে
তোমায় কেউ রাখবে ঢেকে
কোনমতেই সইবে না সে
বারে বারেই জেনেছি।

 এখানে সুস্পষ্ট ঘোষণা রহিয়াছে যে, তাঁহার হৃদয় আকাশে কোন কিছুতেই সেই প্রিয়তম সেই অন্তর্যামীকে ঢাকা বা আবৃত করা যাইতেছে না। এ কী অদ্ভুত লীলা ভগবানের! আর এ কী আশ্চর্য রস-অভিযান ভক্তের!

 রবীন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করিয়া বলিয়াছেন—

মেনেছি, হার মেনেছি।
ধরা দিলেম তোমার হাতে,
যা আছে মোর এই জীবনে
তোমার দ্বারে এনেছি।

 উপনিষদের অঙ্কিত ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষে এক রেখাচিত্র দেখা গিয়ছে—হা৩ বু অহো-অহো-অহো’, এই পরম বিস্ময়-গানে উন্মত্তের ন্যায় তিনি ভূবনে বিচরণশীল। এই হা৩ বু হা৩ বু এই পরমবিস্ময়—ইহার যে কত রূপ ও কত রসপ্রকাশ সম্ভবপর, গীতাঞ্জলিই তাহার প্রমাণ। যথেচ্ছ যে কোন একটি গান গ্রহণ করিলেই তাহা ধরা পড়িবে। একটা গান লওয়া যাক—

তেমার প্রেম যে বইতে পারি
এমন সাধ্য নাই।
এ সংসারে তোমার আমার
মাঝখানেতে তাই