পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৮১

 রবীন্দ্রনাথের রচনা এবং কাব্য দার্শনিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে এবং তাঁহারা সেখানে তত্ত্বের অনুসন্ধান করিয়াছেন দেখা যায়। রবীন্দ্র রচনাবলীর মধ্যে নিছক সাহিত্য-সৃষ্টি বা কাব্য-সৃষ্টি ছাড়া নিশ্চয় এমন কিছু রহিয়াছে, যাহা দার্শনিকদেরও উপজীব্য। পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ডাঃ রাধাকৃষ্ণণ ‘রবীন্দ্রদর্শন’ সম্বন্ধেই স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করিয়াছেন। মনীষী দার্শনিক ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তও রবীন্দ্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করিয়াছেন এবং আরও অনেকেই করিয়াছেন। ইহা সম্ভবপর হইয়াছে এই কারণে যে, রবীন্দ্রনাথকে শুধু ‘কবি’ বলিয়া তাঁহারা কেহই গ্রহণ করিতে পারেন নাই, তাঁহাকে দার্শনিক বলিয়াও গ্রহণে তাঁহারা বাধ্য হইয়াছেন।

 কেহ তাঁহার গবেষণায় দেখাইয়াছেন যে, উপনিষদ এবং বেদান্তই রবীন্দ্রদর্শনের উৎস।

 কেহ বা বলিয়াছেন যে, রবীন্দ্রদর্শনে বৈষ্ণবধর্মেরই প্রভূত প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

 এমন কথাও অনেকে বলিয়াছেন যে, রবীন্দ্রদর্শনে বা রচনায় খীষ্টধর্মের প্রভাব রহিয়াছে।

 বৌদ্ধদর্শন বা কাহিনীর প্রভাবও কেহ কেহ রবীন্দ্র রচনা তথা দর্শনে দেখিয়াছেন।

 সহজিয়া এবং বাউল সম্প্রদায়ের প্রভাব রবীন্দ্রদর্শনে অত্যন্ত স্পষ্ট, ইহাও অনেকে বলিয়াছেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নিজেও বাউলদের গান সম্বন্ধে নিজের অনুরাগ এবং আকর্ষণের কথা বলিয়াছেন।

 কবীর, দাদু প্রমুখ মধ্যযুগীয় সন্তদের প্রভাবও রবীন্দ্রদর্শনে অনেকে আবিষ্কার করিয়াছেন।

 কেহ রবীন্দ্রনাথকে অদ্বৈতবাদী শঙ্করপন্থী বলিয়াছেন, আবার অপরে তাঁহাকে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী বলিয়াছেন।

 রবীন্দ্র-রচনাবলীর ভিত্তিতেই রবীন্দ্রদর্শন এবং পূর্বোক্ত বিভিন্ন অভিমত সৃষ্ট হইয়াছে, বলা বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের কবিতা শুধু কবিতা নয়, তাহার চাইতেও একটু বেশী, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের ‘কবি পরিচয়’ একান্তভাবে কবিতেই সীমাবদ্ধ নহে, অন্তত এই কবি যে একজন ‘দার্শনিক’—ইহাই মনীষিগণের পূর্বোক্ত রচনা ও অভিমতসমূহে হইতে প্রমাণিত হইয়া থাকে।

 এখানে দেখা গেল যে, কবির কাব্যকে দর্শনেরই বিচার্য বিষয়রূপে গ্রহণ করা