বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাপালিকসঙ্গে।
৩১

গেল। কাপালিক বলির প্রাক্‌কালিক ক্রিয়া সমাপনাস্তে বধার্থ খড়্গ লইবার জন্য আসন ত্যাগ করিয়া উঠিল। কিন্তু যথায় খড়্গরক্ষণ করিয়াছিল তথায় খড়্গ পাইল না। আশ্চর্য্য! কাপালিক কিছু বিস্মিত হইল। তাহার নিশ্চিত স্মরণ ছিল যে অপরাহ্নে খড়্গ আনিয়া উপযুক্ত স্থানে রাখিয়া ছিল এবং স্থানান্তরও করে নাই, তবে খড়্গ কোথায় গেল? কাপালিক ইতস্ততঃ অনুসন্ধান করিল। কোথাও পাইল না। তখন পূর্ব্ব কথিত কুটীরাভিমুখ হইয়া কপালকুণ্ডলাকে ডাকিল; কিন্তু পুনঃপুনঃ ডাকাতেও কপালকুণ্ডলা কোন উত্তর দিল না। তখন কাপালিকের চক্ষু লোহিত, ভ্রূযুগ আকুঞ্চিত হইল। দ্রুত পাদবিক্ষেপে গৃহাভিমুখে চলিল; এই অবকাশে বন্ধনলতা ছিন্ন করিতে নবকুমার আর এক বার যত্ন পাইলেন—কিন্তু সে যত্নও নিষ্ফল হইল।

 এমত সময়ে নিকটে বালুকার উপর অতি কোমল পদধ্বনি হইল—এ পদধ্বনি কাপালিকের নহে। নবকুমার নয়ন ফিরাইয়া দেখিলেন সেই মোহিনী—কপালকুণ্ডলা। তাঁহার করে খড়্গ দুলিতেছে।

 কপালকুণ্ডলা কহিলেন “চুপ! কথা কহিও না—খড়্গ আমারই কাছে—চুরি করিয়া রাখিয়াছি।”

 এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা অতি শীঘ্র হস্তে নবকুমারের লতাবন্ধন খড়্গ দ্বারা ছেদন করিতে লাগিলেন। নিমেষ মধ্যে তাহাকে মুক্ত করিলেন। কহিলেন, “পলায়ন কর; আমার পশ্চাৎ আইস, পথ দেখাইয়া দিতেছি।”