এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মুরারিবল্লভা দেবী সর্ব্বশক্লা সরস্বতী।।
দুর্ব্বল দেখিয়া শত্রু দয়া নাহি করি। শরণ লইলে তবু না রাখিবে বৈরী।। বালক দেখিয়া শত্রু না করিবে ত্রাণ। ব্যাধি অগ্নি রিপু জল একই সমান।। শত্রুকে বলিষ্ঠ দেখি বলিবে বিনয়। অপমান আদি ক্লেশ সহিবে হৃদয়।। সদাই থাকিবে তারে স্কন্ধেতে করিয়া। সময় পাইলে মার ভূমে আছাড়িয়া।। পূর্ব্বের বৃত্তান্ত এক শুন নরপতি। বনেতে শৃগাল বৈসে বিজ্ঞ রাজনীতি।। এক দিন বনে চরে একটি হরিণী। অতিশয় মাংস গায় আছয়ে গর্ভিণী।। শৃগাল দেখিয়া কহে মৃগের ঈশ্বরে। যত্নেতেও সিংহ তারে নারে ধরিবারে।। শৃগাল বলিল তবে শুন সখাগণ। ধরিব হরিণ শুন আমার বচন।। বলেতে সমর্থ কেহ নহিবে তাহার। মুষিক হইতে তারে করিবে সংহার।। শ্রান্ত আছে হরিণী শুইবে যেই স্থান। ধীরে ধীরে মুষা তথা করিবে গমন।। দুরে থাকি যাবে তথা করিয়া সুরঙ্গ। নিঃশব্দেতে যাবে যেন না জানে কুরঙ্গ।। সুরঙ্গ কাটিবে তার চরণ যথায়। কাটিবা পদের শির করিয়া উপায়।। পদশিরা কাটা গেলে অশক্ত হইবে। অবহেলে সিংহ তারে অবশ্য ধরিবে।। এত শুনি সম্মত হইল সর্ব্বজন। যা বলিল জম্বুক করিল ততক্ষণ।। কাটা গেল পদশির মুষিক দংশনে। হীনশক্তি দেখি সিংহ ধরিল তখনে।। হরিণ পড়িল সবে হরিষ বিধান। শৃগাল আপন চিত্তে করে অনুমান।। সকল খাইতে মাংস করিব উপায়। চেষ্টার অসাধ্য কিছু নাহিক ধরায়।। ইহা ভাবি শৃগাল করিয়া যোড়কর। নীতি বুঝাইয়া কহে সবার গোচর।। দেখ দৈবযোগে আজি পড়িল হরিণ। মাংস শ্রাদ্ধ করি সবে তোষ' পিতৃগণ।। স্নান করি শুচি হৈয়া সবে আইস গিয়া। ততক্ষণ মৃগ আমি রাখিব জাগিয়া।। বুদ্ধিমান শৃগালের যুক্তি অনুসারে। ততক্ষণে গেল সবে স্নান করিবারে।। সবা হৈতে শ্রেষ্ঠ সিংহ বলিষ্ঠ বিশেষ। গিয়া স্নান করি আসে চক্ষের নিমেষে।। স্নান করি আসি সিংহ দেখয়ে জম্বুকে। অতন্ত বিরস বসি আছে হেঁটমুখে।। সিংহ বলে সখা কেন বিরস বদন। স্নান করি এস মংস করিব ভক্ষণ।। শৃগাল কহিল সখা কি কহিব কথা। মুষিকের বচনে জন্মিল বড় ব্যথা।। মহাবলী সিংহ বলি জানে সর্ব্বজন। আমি মারিলাম মৃগ করিবে ভক্ষণ।। সিংহ বলে হেন বাক্য সহে কোন্ জন। কোন ছার মুষা হেন বলিবে বচন।। না খাইব মাংস আমি খাউক আপনি। নিজ বীর্য্যবলে মৃগ ধরিব এখনি।। হেন বাক্য বলে তার মুখ না চাহিব। আপন অর্জ্জিত বস্তু আপনি খাইব।। এত বলি গেল সিংহ গহন কাননে। স্নান করি ব্যাঘ্র তবে আইল সেখানে।। আস্তে ব্যস্তে কহে শিবা শুন প্রাণসখা। ভাগ্যেতে সিংহ তোমারে না পাইল দেখা।। এখনি গেলেন তিনি তোমা ধরিবারে। আমারে বলিল তুমি না বলিও তারে।। চিরকাল সখা তুমি না বলি কেমনে। বুঝিয়া করহ কার্য্য যেবা লয় মনে।। এতেক শুনিয়া ব্যাঘ্র শৃগাল বচন। হৃদয়ে বিস্মিত হৈয়া ভাবে মনে মন।। নাহি জানি কোন দোষ করিলাম তার। কুপিয়াছে কেন, না বুঝিনু অভিপ্রায়।। এথায় থাকিলে হবে বড়ই প্রমাদ। স্থান তেয়াগিয়া যাব কি কাজ বিবাদ।।