বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্তব মন্ত্রঃ--শ্বেতপদ্মাসনা দেবী-শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।

 বিদুরের প্রিয় তুমি তেঁই পাঠাইল।
 তুমি যে বিদুরতুল্য আজি জানা গেল।।
 আমা সবাকার ভাগ্যে হৈল উপনীত।
 অবধানে দেখ দুষ্ট কৌরব-চরিত।।
 স্বর্ণ জতুগৃহ বাঁশ-সংযোগে রচিত।
 যন্ত্রের খিলানি কৈল গৃহ চতুর্ভিত।।
 করে চতুর্দ্দিকে গর্ত্ত গভীর বিস্তার।
 অক্ষৌহিণীবলে পুরোচন রাখে দ্বার।।
 এইরূপে পড়িয়াছি বিপদ-বন্ধনে।
 উপায় করিয়া মুক্ত কর ছয় জনে।।
 লোকে যেন নাহি জানে সব বিবরণ।
 হেন বুদ্ধি কর তুমি হও বিচক্ষণ।।
 শুনিয়া খনক তবে করিল উত্তর।
 খুদিতে লাগিল গর্ত্ত গৃহের ভিতর।।
 সুরঙ্গের মুখে দিল কপাট উত্তম।
 উপরে মৃত্তিকা দিয়া কৈল ভূমি সম।।
 চতুর্দ্দিকে ছিল গর্ত্ত অতীব গভীর।
 ততোধিক তথায় খনিল মহাবীর।।
 গঙ্গাতীর পর্য্যন্ত খনক খনি গেল।
 সম্পন্ন করিয়া কার্য্য আসি নিবেদিল।।
 শুনিয়া হরিষ চিত্ত পঞ্চ সহোদর।
 প্রণমিয়া খনক চলিল নিজ ঘর।।
 সাবধানে রহে সদা ভাই ছয়জন।
 মৃগয়া করিয়া ভ্রমে বন উপবন।।
 বৎসরেক জতুগৃহে করিল নিবাস।
 পুরোচন জানিল যে হইল বিশ্বাস।।
 পুরোচন মন বুঝি ধর্ম্মের নন্দন।
 ভাইগণ আনিয়া বলিল ততক্ষণ।।
 আমা সবা বিশ্বাস জানিল পুরোচন।
 সাবধান হইয়া থাকিব ছয়জন।।
 আজি রাত্রে অগ্নি দিবে বুঝি পুরোচন।
 বিদুরের কথা ভাই চিন্তহ এখন।।
 ভীম বলে দিবসে করিতে নারে বল।
 রাত্রি হৈলে পাবে দুষ্ট আপনার ফল।।
 কুন্তীদেবী শুনিয়া বলেন পুত্রগণে।
 পলাইয়া কোথায় ভ্রমিবে বনে বনে।।
 ভালমতে কর আজি ব্রাম্ভণ-ভোজন।
 তুষিব বিপ্ররে তোষ' দিয়া বহু ধন।।
 মাতার আজ্ঞায় আনাইল দ্বিজগণ।
 কুন্তীদেবী করাইল ব্রাম্ভণ-ভোজন।।
 ভোজন করিয়া দ্বিজ গেল সর্ব্বজন।
 অন্ন হেতু আইল যতেক দুঃখীগণ।।
 পঞ্চ পুত্রসহ এক নিষাদ-গৃহিণী।
 অন্ন হেতু আসে যথা কুন্তীঠাকুরাণী।।
 পুত্রগণে দেখি কুন্তী জিজ্ঞাসেন তায়।
 আপন দুঃখের কথা নিষাদী জানায়।।
 দিনকর অস্ত গেল নিশা প্রবেশিল।
 যথাস্থানে সর্ব্বলোক শয়ন করিল।।
       ------
      জতুগৃহ-দাহ।
   পরিবার লয়ে গৃহে শোয় পুরোচন।
 কত রাত্রে হইল নিদ্রায় অচেতন।।
 বৃকোদরে আজ্ঞা দেন ধর্ম্মের নন্দন।
 পুরোচনদ্বারে অগ্নি দাও এইক্ষণ।।
 বৃকোদর পুরোচনদ্বারে অগ্নি দিল।
 অগ্নি দিয়া মাতৃসহ গর্ত্তে প্রবেশিল।।
 মাতৃসহ পঞ্চভাই শীগ্রগতি চলে।
 হেথা জতুগৃহ ব্যাপ্ত হইল অনলে।।
 অগ্নির পাইয়া শব্দ গ্রামবাসীগণ।
 জল লৈয়া চতুর্দ্দিকে ধায় সর্ব্বজন।।
 নিকটে যাইতে শক্তি নহিল কাহার।
 চতুর্দ্দিকে ভ্রমে লোক ক'রে হাহকার।।
 জৌঘৃত তৈলের গন্ধ চতুর্দ্দিকে ধায়।
 জতুগৃহ বলিয়া যে লোকে টের পায়।।
 দুষ্ট কর্ম্ম কৈল ধৃতরাষ্ট্র দুরাচার।
 কপটে দহিল পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।।
 ধর্ম্মশীল পঞ্চ ভাই নহে অপরাধী।
 সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় সর্ব্বগুণনিধি।।
 তবে সবে জানিল পুড়িল পুরোচন।
 ভাগ্য ভাগ্য বলিয়া বলেন সর্ব্বজন।।
 নির্দ্দোষগণেরে হিংসা করে যেই জন।
 এইরূপ শাস্তি তারে দেন নারায়ণ।।