বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ

জন্মভূমি” তাঁহার কবি-প্রতিভার অক্ষয় কীর্তিস্তম্ভ। কালীপ্রসন্ন কাব বিশারদের—

যায় যাবে জীবন চলে
জগৎ মাঝে তোমার কাজে
‘বন্দে মাতরম্’ বলে—

এই গান গাহিয়া রাজপথে শত শত শোভাযাত্রা বাহির হইয়াছিল এবং অনেকস্থলে শোভাযাত্রাকারীরা অবিচলিতভাবে পুলিসের লাঠি-বৃষ্টি সহা করিয়াছিল। অতুল সেন ও রজনী সেনের স্বদেশী সংগীতের নূতন করিয়া পরিচয় দিবার প্রয়োজন নাই, তাঁহাদের গান এখনও বাংলার সর্বত্র গীত হইয়া থাকে। কবি কামিনী ভট্টাচার্যের নাম এখন হয়ত লোকে ভুলিয়া গিয়াছেন। কিন্তু স্বদেশী যুগে তাঁহার রচিত সংগীতগুলি বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। সরলা দেবীর ‘নমো হিন্দুস্থান’ বিখ্যাত স্বদেশপ্রেমের সংগীত,— কংগ্রেস, কনফারেন্স, সভা, সমিতি সর্বত্র উহা গীত হইত, এখনও হইয়া থাকে।

 স্বদেশী যুগে বহু নাট্যকার নাটকের মধ্য দিয়া স্বদেশপ্রেম ও জাতীয় ভাবের উদ্বোধন করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষ, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হইয়া থাকিবে। গিরিশচন্দ্র প্রথমে পৌরাণিক এবং পরে সামাজিক নাটক রচনাতেই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু স্বদেশী যুগে তিনি নূতন রূপে দেখা দিলেন, তাঁহার রচিত ‘সিরাজুদ্দৌলা’, ‘মীরকাসিম’, ‘ছত্রপতি শিবাজী’ প্রভৃতি নাটক স্বদেশপ্রেমের উদ্বোধনে অশেষ কার্য করিল। বিশেষভাবে তাঁহার ‘সিরাজুদ্দৌলা’ নাটক এক অপূর্ব সৃষ্টি, দেশবাসীর মনে এই নাটক যে শক্তি সঞ্চার করিয়াছিল, ভাষায় তাহা বর্ণনা করা যায় না।