পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ ৷

প্রভাতকে স্পষ্ট করিয়া অন্য ছাত্রাবাসে যাইতে আদেশ করেন নাই।

 গ্রীষ্মাবকাশে প্রভাত গৃহে আসিল। কিন্তু মন কলিকাতায় রহিল। পিসীমা পূর্ব্বেই বধূকে আনিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। কৃষ্ণনাথ গৃহে পীড়ার অজুহাতে আপত্তি করিয়াছিলেন; শিবচন্দ্র আর জিদ করেন নাই। প্রভাত গৃহে আসিল; কিন্তু এবার যেন গৃহে আর তেমন আকর্ষণ নাই। মুগ্ধ যুবকের কল্পনা পত্নীকে বেষ্টন করিয়া আবর্ত্তিত হয়। জীবনের নিতাত্ত দারুণ অভিজ্ঞতার পর মানুষ বুঝিতে পারে, প্রেমের অবারিত চঞ্চল আবেগই সুখের কারণ। অসম্ভব আদর্শের সন্ধানে ধাবিত হইয়া—অসম্ভব প্রেমের কল্পনা করিয়া তবে মানুষ বুঝিতে পারে, সে চাঞ্চল্যের ভিত্তির উপর সংসার সংস্থাপিত করা অসম্ভব। সে বিচার—সে বিবেচনা যৌবনের ধর্ম্ম নহে। তাহা যৌবনের ধর্ম্ম হইলে মানবের দুঃখ কষ্টের নিবিড় জলদে ইন্দ্রধনু শোভা পাইত না; সহস্র দুঃখ কষ্টে প্রেমের সুখ মানবকে সব ভুলাইতে পারিত না। বরং যৌবনের মোহ যদি চিরস্থায়ী হইত, তবে জীবনে অনেক সুখ থাকিত। যে সময় আমরা কুসুমে মধুর গন্ধ, মলয়ে মদিরতা ও জ্যোৎস্নায় বিহ্বলতা অনুভব করিতে পারি, প্রিয়তমার প্রেমপ্রদীপ্ত আননে নিত্য নব শোভাদীপ্তি দেখিতে পাই,—সে সময় যত দীর্ঘকালস্থায়ী হয়, ততই সুখের, ততই আনন্দের; তাই, জীবনের বসন্ত— যৌবনকাল সুখের। তখন পত্নীর দোষে অন্ধ হইয়া মানুষ গুণেই দৃঢ়লক্ষ্য হয়। তখন

৭৮