లిఅ আমি । আমি তোমার দান লই, তুমি যদি জামার কিছু দান লণ্ড । রজণী । অনেক লইয়াছি । আমি । আরও কিছু লইতে হুইবে । রজনী । একখানি প্রসাদি কাপড় দিবেন । আমি । হুইবে । রজনী । কি দিবেন ? আমি। শচীন্দ্র বলিয়া আমার একটি পুত্র আছে । আমি তোমাকে শচীন্দ্র দান করিব । স্বামিস্বরূপ তুমি তাহাকে গ্রহণ করিবে । তুমি যদি তাহাকে গ্রহণ কর, তবেই আমি তোমার বিষয় গ্রহণ করিব । রজনী দাড়াইয়া ছিল, ধীরে ধীরে বসিয়া পড়িয়া অন্ধ নয়ন মুদিল । তার পর তাহার মুদিত নয়ন হইতে অবিরল জলধারা পড়িতে লাগিল—চক্ষের জল আর ফুরায় না। আমি বিষম বিপদে পড়িলাম । রজনী কথা কহে না—কেবল কঁাদে । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি রজনি ! অত কঁাদ কেন ?” রজনী কঁাদিতে কঁাদিতে বলিল, “সে দিন গঙ্গার জলে আমি ডুবিয়া মরিতে গিয়াছিলাম—ডুবিয়াছিলাম, লোকে ধরিয়া তুলিল । সে শচীন্দ্রের জন্য, তুমি যদি বলিতে, তুমি অন্ধ, তোমার চক্ষু ফুটাইয়৷ দিৰ, আমি তাহ চাহিতাম না—আমি শচীন্দ্র চাহিতাম। শচীন্দ্রের অপেক্ষ এ জগতে আর কিছুই নাই—আমার প্রাণ র্তাহার কাছে, দেবতার কাছে ফুলের কলিমাত্ৰ—শ্ৰীচরণে স্থান পাইলেই সার্থক। অন্ধের দুঃখের কথা শুনিবে কি ?” আমি রজনীর কাতরতা দেখিয়া কাতর হইয়া বলিলাম, “শুনিব ।” তখন রজনী কঁদিতে কাদিতে হৃদয় খুলিয়া আমার কাছে সকল কথা বলিল । শচীন্দ্রের কণ্ঠ, শচীন্দ্রের স্পর্শ, অন্ধের রূপোন্মাদ ! তাহার পলায়ন, নিমজ্জন, উদ্ধার সকল বণিল । বলিয়া বলিল, “ঠাকুরাণি, তোমাদের চক্ষু আছে—চক্ষু থাকিলে এত ভালবাসা বাসিতে পারে কি ?” মনে মনে বলিলাম,“কাণি ! তুই ভালবাসার কি জানিস তুমি লবঙ্গলতার অপেক্ষী সহস্র গুণে জুৰী। প্রকাশ্বে বলিলাম, “ন রজনি ! আমার বুড়া স্বামী—আমি অতশত জানি না। তুমি শচীন্দ্রকে তবে বিবাহ করিবেঃ ইহা স্থির ?” রজনী বলিল, “না ।" জামি । সে কি ? তবে এত কথা কি বলিতেছিলে—এত কঁাদিলে কেন ? তা না । আমি যা দিই, তাই নিতে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী রজনী । আমার সে মুখ কপালে নাই বলিয়াই এত কঁাদিলাম । আমি । সে কি ? আমি বিবাহ দিব । রজনী । দিতে পারিবেন না। অমরনাথ হইতে আমার সৰ্ব্বস্ব । অমরনাথ আমার বিষয় উদ্ধারের জন্ত যাহা করিয়াছেন, পরের জন্য পরে কি তত করে ? তাও ধরি না, তিনি আপনার প্রাণ দিয়া আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছেন । রজনী সে বৃত্তান্ত বলিল। পরে কহিল, “যাহার কাছে আমি এত ঋণী, তিনি আমার যাহা করিবেন, তাহাই হুইবে । তিনি যখন অমুগ্ৰহ করিয়া আমাকে দাসী করিতে চাহিয়াছেন, তখন আমি তাহারই দাসী হুইব, আর কাহারও নহে ।” হরি । হরি ! কেন বাছাকে সন্ন্যাসী দিয়া ঔষধ করিলাম ? বিবাহ ব্যতীতও বিষয় থাকে—রজনী ত এখনই বিষয় দিতে চাহিতেছে । কিন্তু ছি । রজনীর দান লইব ? ভিক্ষণ মাগিয়া খাইব—সেও ভাল । আমি বলিয়াছি—আমি যদি এই বিবাহ না দিই ত আমি কায়েভের মেয়ে নই। আমি এ বিবাহ দিবই দিব । আমি রজনীকে বলিলাম, তবে আমি তোমার দান লইব না । তুমি যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দান করিও । আমি উঠিলাম।” রজনী বলিল, “আর একবার বসুন । আমি অমরনাথ বাবুর দ্বারা একবার অনুরোধ করাইব । র্তাহাকে ডাকিতেছি ।” অমরনাথের সঙ্গে আর একবার সাক্ষাৎ আমারও ইচ্ছা। আমি আবার বসিলাম, রজনী অমরনাথকে ডাকিল । অমরনাথ আসিল ; আমি রজনীকে বলিলাম, “অমরনাথ বাৰু এ বিষয়ে যদি অনুরোধ করিতে চাহেন, তবে সকল কথা কি তোমার সাক্ষাতে খুলিয়া বলিতে পারিবেন ? আপনার প্রশংসা আপনি দাড়াইয়া শুনিও না।” রজনী সরিয়া গেল । চতুর্থ পরিচ্ছেদ লবঙ্গলতার কথা আমি অমরনাথকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুমি রজনীকে বিবাহ করিবে ?” অ । করিব-স্থির