বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ করিলেন। তিনি নিজ সৈন্ত তিন ভাগে বিভক্ত করিলেন। এক ভাগ তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র জয়সিংহের কর্তৃত্বাধীনে পৰ্ব্বতশিখরে সংস্থাপিত করিলেন ; দ্বিতীয় ভাগ, দ্বিতীয় পুত্র ভীমসিংহের অধীনে পশ্চিমে সংস্থাপিত করিলেন ; সে দিকের পথ খোলা থাকে, ; অন্যান্ত রাজপুতগণ সেই পথে প্রবেশ করিয়া সাহায্য করেন, ইহাও অভিপ্রেত। নিজে তৃতীয় ভাগ লইয়া *পুৰ্ব্বদিকে নয়ন নামে গিরিসঙ্কটমধ্যে উপবিষ্ট -“হইলেন । আজম শাহ সৈন্য লইয়া যেখানে উপস্থিত "হইলেন, সেখানে ত পৰ্ব্বতমালায় তাহার গতিরোধ হুইল। আরোহণ করিবার সাধ্য নাই, উপর হইতে গোলা ও শিলাবৃষ্টি হয়। ক্রিয়াবাড়ীর দ্বার বন্ধ হইলে কুকুর যেমন রুদ্ধ দ্বার ঠেলাঠেলি করে, কিছু করিতে পারে না, তিনি সেইরূপ পাৰ্ব্বত্য দ্বার ঠেলাঠেলি করিতে লাগিলেন-ঢুকিতে পাইলেন না। ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে আজমীরে'আক্ব্বরের মিলন হইল। পিতা-পুত্র সৈন্য মিলাইয়া পৰ্ব্বতমালার মধ্যে যেখানে তিনটি পথ খোলা, সে দিকে আসিলেন । এই তিনটি পথ গিরিসঙ্কট । একটির নাম দোবারি ; আর একটি দয়েলবারা ; আর একটি পূৰ্ব্বকথিত নয়ন । দোবারিতে পৌছিলে পর ঔরঙ্গজেব আকৃববরকে ঐ পথে পঞ্চাশ হাজার সৈন্ত লইয়া আগে আগে যাইতে অনুমতি করিয়া উদয়সাগর নামে বিখ্যাত সরোবরতীরে শিবির সংস্থাপন পূর্বক স্বয়ং কিঞ্চিৎ বিশ্রামলাভের চেষ্টা করিলেন। শাহজাদ আক্ব্বর পাৰ্ব্বত্যপথে উদয়পুরে প্রবেশ করিতে চলিলেন । জনপ্রাণী তাহার গতিরোধ করিল না ; রাজপ্রাসাদমালা, উপবনশ্রেণী, সরোবর, তন্মধ্যস্থ উপদ্বীপ সকল দেখিলেন, কিন্তু মনুষ্যমাত্র দেখিতে পাইলেন না । সমস্ত নীরব । আকৃবর তখন শিবির সংস্থাপন করিলেন, মনে করিলেন যে, তাহার ফৌজের ভয়ে দেশের লোক পলাইয়াছে। মোগলশিবিরে আমোদ-প্রমোদ হইতে লাগিল । কেহ ক্টোজনে, কেহ খেলায়, কেহ নেমাজে রত । এমন সময়ে স্বপ্ত পথিকের উপর যেমন বাঘ লাফ ইয়া পড়ে, কুমার জয়সিংহ তেমনই শাহজাদা আক্বারের উপর লাফাইয়া পড়িলেন । বাঘ প্রায় সমস্ত মোগলকে দংষ্ট্রামধ্যে পুরিল-প্রায় কেহ বাচিল না। পঞ্চাশ সহস্ৰ মোগলের মধ্যে অল্পই ফিরিল । শাহজাদা গুজরাট অভিমুখে পলাইলেন । । মাজুম শাহ, যাহার নামান্তর শাহ আলম, তিনি দাক্ষিণাত্য হইতে সৈন্তরাশি লইয়া আহম্মদাবাদ ঘুরিয়া পৰ্ব্বতমালার পশ্চিম প্রাস্তে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । সেই পথ গণরাও নামক পাৰ্ব্বত্য পথ । তিনি সেই পথ উত্তীর্ণ হইয়া কাকরলির সমীপবৰ্ত্তী সরোবর ও রাজপ্রাসাদমালার নিকট উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, আর পথ নাই। পথ করিয়া অগ্রসর হইতেও পারেন না । তাহা হইলে রাজপুতেরা র্তাহার পশ্চাতের পথ বন্ধ করিবে—রসদ আনিবার আর উপায় থাকিবে না – না খাইয়া মরিবেন। যাহারা যথার্থ সেনাপতি, তাহারা জানেন যে, হাতে মারিলে যুদ্ধ জয় হয় না—পেটে মারিতে হয় । যাহারা যথার্থ সেনাপতি, র্তাহারা জানেন যে, পেট চলিবার উপায় বজায় রাখিয়া—হাত চালান চাই । শিখেরা আজিও রোদন করিয়া বলে, শিখ সেনাপতিরা শিখ সেনার রসদ বন্ধ করিল বলিয়া শিখ পরাজিত হইল । সার বার্টল ফ্রিঞ্জর একদা বলিয়াছিলেন, বাঙ্গালী যুদ্ধ করিতে জানে না বলিয়া ঘৃণা করিও না— বাঙ্গালী এক দিনে সমস্ত খাদ্য লুকাইতে পারে । শাহ আলম যুদ্ধ বুঝিতেন, স্থতয়াং আর অগ্রসর হইলেন না । রাজসিংহের সেনাসংস্থাপনের গুণে (এইটিই সেনাপতির প্রধান কাৰ্য্য) বাঙ্গালার সেনা ও দাক্ষিণাত্যের সেনা বৃষ্টিকালে কপিদলের মত—কেবল জড়সড় হইয়া বসিয়া রহিল। মূলতানের সেন ছিন্ন ভিন্ন হইয়া ঝড়ের মুখে ধূলার মত কোথায় উড়িয় গেল । বাকি খোদ বাদশাহ—দুনিয়াবাজ বাদশাহ আলমগীর ।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নয়নবহিও বুঝি জলিয়াছিল শাহজাদা আক্ব্বর শাহকে আগে পাঠাইয়া, খোদ বাদশাহ উদয়সাগরতীরে শিবির ফেলিয়াছেন। পাশ্চাত্য পরিব্রাজক, মোগলদিগের দিল্লী দেখিয়া বলিয়াছিলেন, দিল্লী একটি বৃহৎ শিবির মাত্র । পক্ষাস্তরে, ইহ। বলা যাইতে পারে যে, মোগল বাদশাহদিগের শিবির একটি দিল্লী নগরী । নগরের যেমন চক, তেমনই বড় বড় চক সাজাইয়া তাম্বু পাত হুইত । এমন অসংখ্য চত্বরশ্রেণীতে একটি বক্সনিৰ্ম্মিত মহানগরীর স্বষ্টি হইত। সকলের মধ্যে বাদশাহের তাম্বুর চক। দিল্লীতে যেমন মহার্ঘ্য ইশ্ম্যশ্রেণী মধ্যে বাদশাহ বাস করতেন, তেমনই মহার্ঘ্য হৰ্ম্মশ্রেণীমধ্যে এখানেও বাস করিতেন ; তেমনই দরবার, g