পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা। ] লক্ষণ । ఇ39 এই বলিয়া লক্ষ্মণ রামের সন্ধানে চলিয়া গেলেন । লক্ষ্মণের পুরুষোচিত চরিত্র সৰ্ব্বত্র সতেজ, তাহার পৌরুষদৃপ্ত মহিম সৰ্ব্বত্র অনাবিল, —শুভ্ৰ শেফালিকার দ্যায় স্বনিৰ্ম্মল ও সুপবিত্র । সীতাকর্তৃক বিক্ষিপ্ত অলঙ্কারগুলি সুগ্ৰীব সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছিলেন ; সে সকল রাম এবং লক্ষ্মণের নিকট উপস্থিত করা হইলে লক্ষ্মণ বলিলেন, “আমি হার ও কেয়ুরের প্রতি লক্ষ্য করি নাই, স্বতরাং তাহা চিনিতে পারিতেছি না । নিত্য পদবন্দনাকালে তাহার নুপুরযুগ্ম দর্শন করিয়াছি এবং তাহাই চিনিতে পারিতেছি । কিষ্কিন্ধ্যার গিরিগুহাস্থিত রাজধানীতে প্রবেশ করিয়া গিরিবাসিনী রমণীগণের নুপুর ও কাঞ্চীর বিলাসমুখর নিস্বন শুনিয়া “সৌমিত্রিলজ্জিতোহভবৎ ।” এই লজ্জা প্রকৃত পৌরুষের লক্ষণ, চরিত্রবান সাধুপুরুষেরাই এইরূপ লজ্জা দেখাইতে পারেন । যখন মদবিহবলাক্ষী নমিতাঙ্গযষ্টি তারা তাহার নিকট উপস্থিত হইল,—তাহার বিশালশ্রোণীশ্বলিত কাঞ্চীর হেমস্বত্র লক্ষ্মণের সম্মুখে মৃদুতরঙ্গিত হইয়া উঠিল, তখন “অবায়ুখোহভবৎ মমুজপুত্রঃ”—লক্ষ্মণ লজ্জায় অধোমুখ হইলেন । এইরূপ দুইএকটি ইঙ্গিতবাক্যে পরিব্যক্ত লক্ষ্মণের নৈতিক সাধুত্বের ছবি আমাদের চক্ষের নিকট উপস্থিত হয় । তখন প্রকৃতই তাহাকে দেবতার ভtয় পূজাহ মনে হয় । রামায়ণে লক্ষ্মণের মত পুরুষকারের উজ্জ্বল চিত্র আর দ্বিতীয় নাই। ইনি সতত নিৰ্ভীক, বিপদে অকুষ্ঠিত, স্বীয় ক্ষুরধার তীক্ষবুদ্ধি সত্বেও ভ্রাতৃস্নেহের বশবৰ্ত্তী হইয়। একে বারে আত্মহারা হইয়া পড়িয়ছিলেন। নিতান্ত বিপদেও তাহার কণ্ঠস্বর স্ত্রীলোকের দ্যায় কোমল হইয় পড়ে নাই। যখন তিনি কবন্ধের বিশালহস্তের সম্পূর্ণরূপ আয়ত্ত হইয়। পড়িয়াছিলেন, তখন রামের প্রতি দৃষ্টি করিয়৷ এইমাত্র তিনি বলিয়াছিলেন—“দেখুন অামি রাক্ষসের অধীন হইয়া পড়িতেছি, আপনি আমাকেই বলিস্বরূপ রাক্ষসের হস্তে প্রদান করিয়া পলায়ন করুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনি সীতাকে শীঘ্র ফিরিয়া পাইবেন । র্তাহাকে লাভ করিয়া পৈতৃক রাজ্যে পুনরধিষ্ঠিত হইয়। আমাকে স্মরণ রাখিবেন।” এই কথায় বিলাপের ছন্দ নাই । ইহাতে রামের প্রতি অসীম প্রীতি ও স্বীয় আত্মোৎসর্গের অতুল্য ধৈর্য্য স্বচিত হইয়াছে। ক্ষত্ৰিতেজের এই জলন্ত মূৰ্ত্তি, এই মৌন ভ্রাতৃভক্তির আদর্শ, হিন্দুস্থানে চিরদিন পূজা পাইয়া আসিয়াছেন । “রাম-সীতা” এই কথা অপেক্ষণ ও বোধ হয় “রাম-লক্ষ্মণ” এই কথা এতদ্দেশে বেশী পরিচিত। সৌভ্রাত্রের কথা মনে হইলে “লক্ষ্মণ" অপেক্ষা প্রশংসাৰ্ছ উপমান আমরা কল্পনা করিতে পারি না । ভরত ভ্রাতৃভক্তির পলায়,—স্বকোমল ভাবের সমৃদ্ধ উদাহরণ । কিন্তু লক্ষ্মণ ভ্রাতৃভক্তির অন্নব্যঞ্জন, জীবিকার সংস্থান । আজ আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের গৃহগুলিকে লক্ষ্মণ-শূন্ত করিতেছি। আজ বহুস্থানে সহধৰ্ম্মিণীর স্থলে স্বার্থরূপিণী, অলঙ্কণরপেটিকার যক্ষীগণ অামাদিগকে ঘিরিয়া গৃহে একাধিপত্য স্থাপন করিতেছে ; যাহার এক উদরে স্থান পাইয়াছিলেন, র্তাহারা আজ এক গৃহে স্থান পাইতেছেন না। হায়, কি দৈববিড়ম্বন, যাহাদিগকে